ওয়াটারকিপার্সের গবেষণা
বছরে ৩১৭ দিন মারাত্মক দূষিত থাকে ঢাকার বায়ু
এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকছে।
দূষণের মানমাত্রা বিবেচনায় বছরের বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থাকে রাজধানী ঢাকার বাতাস। মাঝেমধ্যে এটা ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে গিয়েও ঠেকে। বিশেষত শীতকালে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি থাকে সবচেয়ে খারাপ। ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সময় (৩১৭ দিন) ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মশালায় গবেষণার এ তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরা হয়। বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এই কর্মশালার আয়োজন করে। ঢাকা শহরের পানি, বায়ু ও শব্দদূষণবিষয়ক পরিবীক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গবেষণাটি করা হয়েছে।
গবেষণায় ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঢাকা শহরের নির্বাচিত ১০টি এলাকা থেকে শব্দ ও বায়ু মানের নমুনা সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর ডায়িং, নৌযান ও ট্যানারি দূষণের চারটি এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন গবেষক দল। একই সঙ্গে গবেষণায় নদীপারের সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজের মতামত গ্রহণ ছাড়াও এসংক্রান্ত নীতি, আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পর্যালোচনা করা হয়েছে।
কর্মশালায় গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সময় ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) করা নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে। মূলত বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজের ধুলা, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির ধোঁয়া, ইটভাটাসহ শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে এই দূষণ হয়।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বছরের অর্ধেক সময় ঢাকার সবচেয়ে দূষিত বায়ু থাকে শাহবাগ এলাকায়। বর্ষায় সবচেয়ে দূষিত বায়ু মিরপুরের। বর্ষার পরের সময়টাতে তেজগাঁওয়ে বাতাস সবচেয়ে দূষিত থাকে। দূষণ রোধে সরকারি সংস্থার অবহেলা সবচেয়ে বেশি দায়ী। অনেক ক্ষেত্রে খোদ সরকারি সংস্থাগুলো বায়ুদূষণ করছে।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
কর্মশালায় গবেষণার তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহম্মদ কামরুজ্জমান মজুমদার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম। কর্মশালায় উপস্থাপন করা গবেষণা নিবন্ধের ওপর বিশেষজ্ঞ মতামত দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিবেশ ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞ মুনির হোসেন চৌধুরী।
প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এখানে উপস্থাপন করা তথ্য–উপাত্ত দেশের সব নদীর চিত্র তুলে ধরে না। তবে এটাকে ঢাকার নদীর চিত্র তুলে ধরে—এমন প্রতিনিধিত্বকারী তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। যাঁরা এই কাজটি করেছেন তাঁরা প্রশংসার দাবি রাখেন। তবে দখলের কারণে নদীদূষণের তীব্রতা কতখানি বৃদ্ধি পেয়েছে, তা এ তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণে পাওয়া যায়নি। এ জন্য তিনি নদী দখল নিয়ে তথ্য সংগ্রহের পরামর্শ দেন।
মুজিবুর রহমান বলেন, নদী, পানি, পরিবেশ নিয়ে দেশে আইন আছে। তবে এসব আইনের প্রয়োগ নেই, প্রয়োগ করার মানুষ নেই। আর মানুষ থাকলেও তাঁদের আইন প্রয়োগ করার সে সাহস নেই। প্রতিটি বিভাগের জবাবদিহির জায়গা নিশ্চিত করতে হবে, তাহলে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার চারপাশের চারটি নদী দূষণ ও দখলের কারণে মৃত। অথচ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছে। দেশের নদীগুলোর দূষণ কমাতে হলে দূষণকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। নদী দূষণমুক্ত করার নীতির প্রচলন করতে হবে।
কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বায়ু, শব্দ ও নদীদূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।