শিল্পমালিকেরা তবু নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগ্রহী

উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লেও শিল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হয়নি।এখন লোডশেডিং বেড়েছে। তাই শিল্পমালিকেরা নিজস্ব কেন্দ্র করছেন।

সরকার সারা দেশকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও এখন চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ। তবু শিল্পমালিকেরা কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র (ক্যাপটিভ) করতেই আগ্রহী।

দেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে অনুমোদন নেওয়ার সংখ্যা বেড়ে আড়াই গুণ হয়েছে। এই অর্থবছরে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১১৫। আগের অর্থবছরে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ৪৪টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র। দেশে লোডশেডিং বাড়ার পর নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবেদন আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গত ২২ আগস্টের বোর্ড সভায় উঠেছিল ২০টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবেদন।

এর বাইরে অনেকেই নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে আবেদন করছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরেও ৭৯টি সক্ষমতা বাড়ানোর আবেদন অনুমোদন পেয়েছে।

শিল্প বাঁচাতে ও বিনিয়োগ নিরাপদ করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যই ছুটছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র করলেও জ্বালানির সরবরাহ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।
এম শামসুল আলম, সহসভাপতি, ক্যাব

সব মিলিয়ে এখন কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৬০। এসব কেন্দ্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ৭২৩ মেগাওয়াট, যার ১ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট ডিজেলভিত্তিক। অবশ্য ডিজেলভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৯২ মেগাওয়াট ক্ষমতা হলো ছাড় সনদের (ওয়েভার সার্টিফিকেট) আওতায় ছোট আকারের কেন্দ্র, যা সাধারণভাবে জেনারেটর হিসেবে পরিচিত।

বিইআরসির কর্মকর্তা ও শিল্পমালিকেরা কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ক্ষেত্রে তিনটি কারণের কথা বলছেন—

১. কারখানায় গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া বিদ্যুতের দামের চেয়ে কম। গ্রিড থেকে বিদ্যুতের দাম শিল্পে প্রতি ইউনিট গড়ে সাড়ে আট টাকার মতো। গ্যাস দিয়ে নিজেরা উৎপাদন করলে খরচ পড়ে চার টাকার কম। অবশ্য ডিজেলের ক্ষেত্রে ব্যয় অনেক বেশি পড়ে।

২. বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সংযোগ নেওয়া ও পরবর্তী সময়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এর বদলে একবার গ্যাসের সংযোগ নিয়ে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ঝক্কি কম।

৩. নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না বলে বিপুল সক্ষমতার জেনারেটর বসাতে হয়, যা একধরনের ক্যাপটিভ। এখন কারখানামালিকেরা লোডশেডিংয়ের কারণে বাড়তি ব্যয়ের ডিজেলভিত্তিক কেন্দ্র করছেন।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এত বেশি থাকার পরও কারখানার উদ্যোক্তারা নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন করতে চান, জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পেয়ে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা থেকেই ব্যবসায়ীরা নিজস্ব কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকতে পারেন। সামনে বড় মন্দার আশঙ্কায় বিদ্যুৎ না পাওয়ার অনিশ্চয়তাও কাজ করতে পারে।

শিল্পে নিজেরা বিদ্যুৎকেন্দ্র বসাতে চাইলে বিইআরসির কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কোনো কারখানায় নিজস্ব কেন্দ্র যদি এক মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতার হয়, তাহলে লাইসেন্স নিতে হয়। আর এক মেগাওয়াটের কম হলে ছাড় সনদ (ওয়েভার সার্টিফিকেট) নিতে হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে একসময় বিদ্যুৎ–সংযোগ পাওয়া যেত না। পেলেও তা অনেক কঠিন ছিল। তখন শিল্পমালিকেরা কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র করা শুরু করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় জোর দেয়। পরে উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ে, লোডশেডিং একেবারেই কমে যায়। ফলে শিল্পে বিদ্যুৎ–সংযোগ পাওয়া সহজ হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে, কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে ব্যবসায়ীদের ঝোঁক কমেনি, বরং বাড়ছে।

এক মেগাওয়াট ক্ষমতার নিজস্ব একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে না পারলে কারখানামালিকেরা নিজস্ব ব্যবস্থা রাখবেনই। কারণ, যখন বিদ্যুৎ থাকবে না, তখন তো কারখানা বন্ধ রাখা যাবে না।

বিইআরসির ২২ আগস্টের বোর্ড সভায় যেসব আবেদন উঠেছিল, তার একটি বান্দো ইকো অ্যাপারেলস লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন এজাজ প্রথম আলোকে বলেন, জেনারেটরের ক্ষমতা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে অনুমোদন নিতে হয়।

তাঁরা সেই আবেদনই করেছেন। তিনি বলেন, ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে সরকারের বিদ্যুতের চেয়ে তিন-চার গুণ খরচ পড়ে। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় এখন জেনারেটর দিয়ে বাড়তি সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে, কারখানার উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সেই উদ্যোগ

২০১২ সালে বিইআরসি ‘কিউ’ শ্রেণি নামে নতুন একটি গ্রাহক শ্রেণি তৈরি করে, যা কার্যকর হয় ওই বছর ১ জুন থেকে। তখন এই শ্রেণির আওতায় শিল্পমালিকদের জন্য বাড়তি দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হয়।

শিল্পে তখন প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ছিল সাড়ে পাঁচ টাকার মতো। নিরবচ্ছিন্নের ক্ষেত্রে দাম ধরা হয় প্রায় সাড়ে ১৪ টাকা। চড়া দামের কারণে এই শ্রেণির গ্রাহক হতে শিল্পমালিকদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যায়নি। তখন এত বেশি দর নির্ধারণ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছিল।

বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকাকে অজুহাত হিসেবে দেখান।

আসলে গ্যাসভিত্তিক কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তাঁদের খরচ কমে যায়। এ কারণেই তাঁদের এত আগ্রহ। তিনি বলেন, ডিজেল দিয়ে তাঁরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতেই পারেন। তবে কারখানায় গ্যাসভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে আপত্তি আছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রই গ্যাস পায় না

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসাবে, জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২১ হাজার ৭১২ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ চাহিদার সময় গত ১৬ এপ্রিল উৎপাদন করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। এটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন। চাহিদা না থাকায় বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা বসিয়ে রাখতে হয়। বসিয়ে বসিয়ে কেন্দ্রভাড়াও (ক্যাপাসিটি চার্জ) দিতে হয়।

এখন অবশ্য জ্বালানিসংকটে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে পরিকল্পিত লোডশেডিং করা হচ্ছে।

পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা এখন ১১ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। গ্যাস দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গত অর্থবছরে গড়ে ব্যয় হয় সাড়ে তিন টাকার মতো। যদিও এখন গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হয় ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

গ্যাসের বিপরীতে ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির গড় খরচ হয়েছে ৩৬ টাকা ও ফার্নেস অয়েলে ১৭ টাকা। এমনকি কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও পিডিবির খরচ হয়েছে গড়ে ১৩ টাকার বেশি। ব্যয় কম হলেও গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে না পারার কারণ এটির অভাব।

গ্যাসের অভাব নতুন নয়। ২০১০ সাল থেকে দেশে গ্যাসের সরবরাহ সংকট শুরু হয়। এর পর থেকে আবাসিকে নতুন গ্যাস–সংযোগ বন্ধ করে দেয় সরকার। ২০১২ সাল থেকে শিল্প ও নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংযোগ দেওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ কমিটি করা হয়। পরে অবশ্য গ্যাসের উৎপাদন বাড়তে থাকলে শিল্পে সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা উদারতা দেখানো শুরু করে সরকার।

২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হয়। এরপর কিছু কিছু নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের সংযোগ পায়। নতুন গ্যাস–সংযোগ পেতে বিভিন্ন সময় তদবির–বাণিজ্য হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

পিডিবি সূত্র বলছে, এখন দেশের মোট গ্যাসের ৪০ শতাংশ ব্যবহার করে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর ২০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করে নিজস্ব কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হয় ২ হাজার ৯৪৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে গ্যাসভিত্তিক নতুন ক্যাপটিভের অনুমোদন না দেওয়ার আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এর মধ্যে নিয়মিত অনুমোদন পাচ্ছে এ ধরনের কেন্দ্র। সবচেয়ে বেশি গ্যাসভিত্তিক নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রাহক রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতায়।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, নিজস্ব কেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগের অনুমোদনের এখতিয়ার তিতাসের পরিচালনা পর্ষদের হাতে। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে এখন অনুমোদন তেমন হচ্ছে না। শেষ দুই মাসের বোর্ড সভায় একটিরও অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

শিল্পের দরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে গেলে দুই বছর আগে বিদ্যুৎ রপ্তানিরও আলোচনা শুরু করে সরকার।

নিজস্ব কেন্দ্র নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে পিডিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম কয়েক গুণ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এখন নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম ১৬ টাকা।

নিজস্ব কেন্দ্র নিরুৎসাহিত করতে কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি। আর এখন তো লোডশেডিংই বেড়ে গেছে। তাই ব্যবসায়ীরা নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য দরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র, জ্বালানির প্রয়োজনীয় সরবরাহ এবং উন্নত বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থা। সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যতটা জোর দিয়েছে, জ্বালানির উৎস নিশ্চিত করা ও সঞ্চালন লাইন উন্নত করতে ততটা জোর ছিল না।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পুরো বিদ্যুৎ খাতের সরকারি ব্যবস্থাপনা অকেজো হয়ে গেছে।

তাই শিল্প বাঁচাতে ও বিনিয়োগ নিরাপদ করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্যই ছুটছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র করলেও জ্বালানির সরবরাহ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। ডলার–সংকটে এলএনজি ও ডিজেল আমদানি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।