অনিল মারান্ডী ছিলেন গণমানুষের নেতা

অনিল মারান্ডীর স্মরণে বুধবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে নাগরিক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
অনিল মারান্ডীর স্মরণে বুধবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে নাগরিক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

অনিল মারান্ডী ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি শোষিত ও নিপীড়িত মানুষকে একতাবদ্ধ করে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করার পরও তিনি সংগ্রাম আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আজ বুধবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মিলনায়তনে নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, অনিল মারান্ডী গাইবান্ধার সাঁওতালপল্লিতে হামলার পর নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে রাত কাটিয়েছেন। দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করার পরও তিনি সংগ্রাম–আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আদিবাসী পরিচয়হীনতা তাঁকে পীড়িত করত। যত দিন অনিল মারান্ডীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হবে, তত দিন আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, আদিবাসীদের জমি রক্ষার জন্য অনিল মারান্ডী সংগ্রাম শুরু করেন। প্রথম জীবনে তাঁর সাহসী ভূমিকার জন্য সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পায় রাজশাহীর বাবুডাইং গ্রাম। অনিল মারান্ডী ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি শোষিত ও নিপীড়িত মানুষকে একতাবদ্ধ করে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি কমিশনের আদলে সমতলেও আদিবাসীদের ভূমি কমিশন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন অনিল মারান্ডী।

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, অনিল মারান্ডী আদিবাসীদের জন্য লড়াই করেছেন এবং লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন। গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, তিনি শুধু সাঁওতালদের নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন নিপীড়িত আদিবাসী মানুষের নেতা। তাঁর যুক্তিগুলো ছিল তীক্ষ্ণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেসবাহ্ কামাল বলেন, অনিল মারান্ডী গণমানুষের স্লোগানের কাব্য লিখে গেছেন। বেঁচে থাকার জন্য তিনি অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন। তিনি শুধু সাঁওতালদের জন্য নয়, সব আদিবাসীর কথা ভেবেছেন।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, একজন মানুষ হিসেবে অনিল মারান্ডী সার্থক ছিলেন। প্রকৃতপক্ষেই তিনি মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর ত্যাগের মহিমা আগামী প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি সারা জীবন শোষিত মানুষের কথা বলেছেন।

স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং। সভার শুরুতে অনিল মারান্ডীর জীবনীর সংক্ষিপ্তসার পাঠ করেন মানবাধিকারকর্মী অলি কুজুর। পরে সাঁওতালি শোকসংগীত পরিবেশন করা হয়। স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন আইইডির নির্বাহী পরিচালক নূমান আহমদ খান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা, আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্র্যাট সদস্য জান্নাত-ই-ফেরদৌসী প্রমুখ।

৭ জানুয়ারি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটের পাঁচগাছিয়া গ্রামে অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যান অনিল মারান্ডী। বিজ্ঞপ্তি।