অনিয়মে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে ঠিকাদার মিঠুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: দুদক

সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে দুটি ফাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এ কথা জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এই কার্যক্রমে স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদার মোতাজজেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর বিরুদ্ধে অনিয়মে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে দুদকের দাখিল করা এক বক্তব্য থেকে এই তথ্য জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটি শুনানির অপেক্ষায় ছিল। তবে এদিন শুনানি হয়নি।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, সম্পদের বিবরণী দাখিল না করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ১০ মে মিঠুর বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রার্থনা জানান সংস্থাটির তদন্ত কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ অব্যাহতির আদেশ দেন। মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো বলে জানান বিচারক।
এই আদেশ স্থগিত চেয়ে ও অভিযোগের ওপর পুনরায় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে রিট করেন ঢাকার বনশ্রীর বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয় দুদককেও। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ জানুয়ারি দুদকের পক্ষ থেকে হলফনামা আকারে লিখিত বক্তব্য দাখিল করা হয় আদালতে।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান খান ও চঞ্চল কুমার বিশ্বাস। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
চঞ্চল কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, মিঠুর বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে গত ১৫ ডিসেম্বর রিট আবেদনকারীর পক্ষে দুদককে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর রিটের শুনানিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে সময় নেন দুদকের আইনজীবী। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৪ জানুয়ারি দুদক হলফনামা আকারে বক্তব্য দাখিল করে, যেখানে ওই নোটিশের জবাবও যুক্ত করা হয়। তবে নথি না আসায় আজ শুনানি হয়নি।

মিঠুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তার ভিত্তিতে অনুসন্ধান

রিটকারীর পক্ষে দেওয়া নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ জানুয়ারি দুদকের মহাপরিচালক মো. মফিজুর রহমান ভূঞা স্বাক্ষরিত জবাবে বলা হয়, আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন। তাই দুদকের পক্ষে করার কিছু ছিল না বলে প্রতীয়মান হয়। তবে ভবিষ্যতে তাঁর (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে এর ভিত্তিতে দুদক অনুসন্ধান বা তদন্ত করবে। এ ছাড়া আদালত যদি দুদকের প্রতি কোনো নির্দেশনা দেন, তবে দুদক সে অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

জবাবে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে দুদকে দুটি ফাইলে কার্যক্রম চলছে। এই নথি দুটির অনুসন্ধান কার্যক্রমে মিঠুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর ভাষ্য, অজ্ঞতাবশত মিঠু নির্ধারিত সময়ের পর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেন এবং তিনি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন করদাতা উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। আইন অনুযায়ী অজ্ঞতা কোনো ব্যক্তিকে তাঁর অপরাধ থেকে অব্যাহতি দিতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর অন্যতম। স্বাস্থ্য খাতে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মে ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ জড়িত বলে গণমাধ্যম ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যে কারণে রিটটি করা হয়েছে।