অনুশীলনের সময় প্রতিদিন ৫টা ডিম খান জীবন বলী

আবদুল জব্বারের বলীখেলার ১১৩তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন চকরিয়ার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম ওরফে জীবন বলী। ২৮ বছর বয়সী জীবন বলী খেলা শেষে কথা বলেছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক সুজয় চৌধুরীর সঙ্গে।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রেফারিদের সঙ্গে জীবন বলী-ফাইল
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল আবেদীন বলীকে একেবারে ধরাশায়ী করেছেন। প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন। পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। শেষে জয়ী হলেন। কেমন লাগছে?

জীবন বলী: সত্যি বলতে, এটা অসাধারণ অনুভূতি! হাজার হাজার দর্শকের সামনে খেলা দেখিয়েছি। দর্শকেরা আমার নাম ধরে উল্লাসধ্বনি দিয়েছেন। তখন জয়ের জন্য আরও বেশি মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। আর জয়-পরাজয় শুধু নয়, আবদুল জব্বারের এই ঐতিহাসিক খেলায় অংশ নিতে পারাও অত্যন্ত গর্বের।

প্রশ্ন :

জব্বারের বলীখেলায় প্রথম কবে অংশ নিয়েছিলেন? আগেও একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। শুরুর গল্পটা যদি বলতেন।

জীবন বলী: বাপ-দাদার মুখে জব্বারের বলীখেলার কথা শুনেছি। কক্সবাজার, চকরিয়া কিংবা মহেশখালীর অসংখ্য বলী এই খেলায় অংশ নিতেন। তাঁদের গল্প শুনেছি। ফলে ছোটবেলা থেকেই একটা টান অনুভব করতাম। ২০১২ সালে প্রথম জব্বারের বলীখেলায় অংশ নিই। এরপর ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হই। পরের বার ২০১৯ সালে হই রানারআপ। এবার তো চ্যাম্পিয়নই হলাম।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

পরিবারে কে কে আছেন? জয়ের খবর কি ঘরে পৌঁছেছে?

জীবন বলী: বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর। ঘরে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। জয়ের খবর তারা আপনাদের সংবাদের মাধ্যমে জেনেছে। অনেক খুশি তারা। মেলা থেকে সন্তানদের জন্য নানা খেলনা নিয়ে যাব। তারা ইতিমধ্যে অনেক কিছু কিনে নিয়ে যেতে বলেছে।

প্রশ্ন :

বলীখেলার চর্চা কীভাবে, কখন করেন? পেশা কী আপনার?

জীবন বলী: পেশায় আমি একজন শ্রমিক। যখন যা পাই, তা–ই করি। আবদুল জব্বারের বলীখেলা হয় বৈশাখ মাসে। এর আগে প্রতিবছর চৈত্র মাসে গ্রামে বলী খেলি। ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করি। চর্চা বলতে এটুকুই।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

খাওয়াদাওয়ার কথা যেহেতু তুললেন, মেনুটা কি জানতে পারি?

জীবন বলী: মেনু বলতে কী কী খাই, তাই তো? আসলে আমার বেড়ে ওঠা টানাটানির সংসারে। মাছে-ভাতে বড় হওয়া। তিনবেলা ভাত খাই। প্রতি বেলায় দুই প্লেট না খেলে পেট ভরে না। ভাতের সঙ্গে ডিম ভাজা, ডাল, সবজি। কখনো মাছ, মাংস। যখন বলী খেলার অনুশীলন করি, তখন প্রতিদিন ৫টা ডিম খাই। এভাবে চলে যায়।

প্রশ্ন :

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? বলীখেলায় জিতলে জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন আসে?

জীবন বলী: পরিবর্তন তো আসেই। কত মানুষ চেনে। যেখানে যাই, সবার ভালোবাসা পাই। সবাই আদর করে। প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনেক জায়গায় খেলার ডাক পাই। এবারও ঈদের পর কুমিল্লা, কক্সবাজার, পটিয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁসহ দেশের নানা জায়গায় খেলা আছে।