অনৈতিকতার পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ জায়গা ভাবা হয়। সেখানে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সারা দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। সিলেট এমসি কলেজে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ঘাটতির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। এ নিয়ে দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের অভিমত, যাঁরা এমসি কলেজেরও প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের মানসিকতা এমনভাবে তৈরি হচ্ছে, তারা এখন নিজেদের আর ছাত্র ভাবে না, বিশেষ করে রাজনীতির খাতায় নাম লেখানোর পর। আমি খুব অবাক হলাম এটা দেখে, এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনের মধ্যে তিনজন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। এরা বিভাগে শুধু নাম লিখিয়েছে, সঙ্গে ছাত্রলীগের পরিচয় জোগাড় করেছে।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সদস্য হয়ে তাদের মানসিকতা এমন হয়েছে যে তারা নিজেদের রাজা মনে করছে। এদের মানসিকতা নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি এবং ক্ষমতার মোহ। রাজনীতির ভালো কাজ এরা গ্রহণ করে না।

এই শিক্ষার্থীরা কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়, তার সীমারেখা ভুলে যাচ্ছে। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া এই সীমারেখা সম্ভব নয়। আমি নিজেও এমসি কলেজের ছাত্র ছিলাম। আমাদের সময়ে অধ্যক্ষকে শিক্ষার্থীরা ভয় পেত, শ্রদ্ধা করত। তখন কলেজে রাজনীতি ও মাস্তানি ছিল না। তখন নৈতিক শিক্ষা ছিল, যা এখন নেই।

সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম

এমসি কলেজের ছাত্রাবাস এর আগে একবার পুড়িয়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগের ছেলেরা। এত বড় একটা ঘটনার কি বিচার হয়েছে, হয়নি। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী শুধু চোখের পানি নীরবে ফেললেন। তখন শাস্তি দেওয়া হলে আজকে এমসি কলেজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটত না। দুর্বৃত্তদের পেছনে সব সময় প্রভাবশালীদের হাত থাকে। তবে সাধারণত দুর্বৃত্তরা বিপদে পড়লে প্রভাবশালীরা সটকে পড়ে। এমসি কলেজের ধর্ষণের ঘটনায় যে ছয়জন, তাদের গডফাদাররা কোথায়?

আমরা নৈতিকতার পর্যায় পার হয়ে এখন অনৈতিকতার পর্যায়ে পৌঁছেছি। সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি চলছে। যারা এসব করছে, তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী পড়ে না। বঙ্গবন্ধুর বই বাড়িতে হয়তো সাজিয়ে রেখেছে, কিন্তু পড়ে না। পড়লেই তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতে হবে, আত্মত্যাগ করতে হবে।

শিক্ষাঙ্গন নষ্ট হয়েছে সংকীর্ণ ক্ষমতার রাজনীতি এবং হল দখলের রাজনীতির পাল্লায় পড়ে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নৈতিকতা উৎপাদন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মুখস্থবিদ্যায় সনদধারী শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে নৈতিক শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে না। পারিবারিক শিক্ষাও নেই। অপরাধের পরও বাবা যখন ছেলের পক্ষে বলেন, তখন বোঝা যায় সমাজের অধঃপতন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অবক্ষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এমসি কলেজের অধ্যক্ষকে দেখি শুধু হতাশা প্রকাশ করতে। অথচ সেই কলেজেই এমন একজন অধ্যক্ষ ছিলেন, যাকে পাকিস্তান আমলে স্থানীয় প্রশাসন ভয় পেত, স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা সম্মান করত। সমাজে শিক্ষকদের ভূমিকা এখন নেই। এখন শিক্ষার্থীদের মানসিক গঠন করে দিচ্ছে রাজনীতি, যা তাদের ক্ষমতায়ন করেছে। ক্ষমতাবলে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে তারা।