অন্য রকম পতেঙ্গা সৈকত

>
- দুই ভাগে সৈকতের পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ
- প্রথম ভাগের কাজ শেষ পর্যায়ে
দুপাশে যত দূর চোখ যায় কেবল মানুষ আর মানুষ। তাঁদের কোলাহলে ছাপিয়ে যাচ্ছিল ঢেউয়ের গর্জন। কেউ ব্যস্ত সুসজ্জিত বাগানের ফুলের সঙ্গে মিলেমিশে ছবি তুলতে। কেউ বা বসার আসনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন আয়েশে। অনেকেই আবার হাঁটাপথ (ওয়াকওয়ে) ধরে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। অনেকে একটু নিচে নেমে সমুদ্রের বালুচরে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
এমন পরিবেশ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে। এর ফলে চার স্তর থেকে উপভোগ করা যাচ্ছে সমুদ্রদর্শন।
চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং সড়ক থেকে সমুদ্রের দিকে নামতেই ৩০ ফুট প্রশস্তের হাঁটাপথ। এরপরেই অভ্যর্থনা জানাবে সুসজ্জিত বাগানের রং-বেরঙের বর্ণিল নানা ধরনের ফুল। এরপর বসার জন্য হাজারো আসন। এত উপভোগের পরেই হাঁটা যাবে সৈকতে, মিলবে সমুদ্রের নোনা পানি ছোঁয়ার স্বাদ।
এক বছর আগেও এমন রূপে দেখা যায়নি সৈকত। হাঁটার পথ ছিল না। ঢোকার মুখে ছিল ঝুপড়ি। বসার কোনো স্থান ছিল না। সৈকতে নামতেও পোহাতে হতো ভোগান্তি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ সৈকতে যেন হাজারো মানুষের মিছিল নেমেছিল। তাঁদের অনেকের মুখে মুখেই ছিল—সৌন্দর্যবর্ধনের দিক থেকে এ সৈকত ছাড়িয়ে গেছে কক্সবাজারকেও। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া এলাকা থেকে বাসে চেপে বেড়াতে এসেছিল ৩০ থেকে ৪০ জনের বন্ধুর দল।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থাকতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে কেন—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল এ দলের দুই সদস্য মোহাম্মদ আরাফাত ও মোহাম্মদ শহীদের কাছে।
তাঁরা বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সৈকত হলেও অবকাঠামোগতভাবে তেমন উন্নয়ন হয়নি। কিন্তু কয়েক দিন আগে ফেসবুকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছি। দর্শনার্থীদের জন্য এত সুযোগ-সুবিধা কল্পনার বাইরে ছিল। তাই চলে এলাম।’

সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হওয়ায় দর্শনার্থীরা বেশি আসছেন বলে জানিয়েছেন সৈকতের ঘোড়ার সহিস মোহাম্মদ ফয়সাল। তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে প্রতিদিন মানুষ আসছেন। আর ছুটির দিনগুলোতেও তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না।
পর্যটকদের চাপে অবসর পাচ্ছিলেন না স্পিডবোট চালকেরা। এসব বোট চেপে সমুদ্রের চক্কর দিচ্ছিলেন দর্শনার্থীরা। সৈকতে বর্তমানে ৫০টি স্পিডবোট আছে বলে জানিয়েছেন চালকদের একজন জাহাঙ্গীর উদ্দিন। তিনি বলেন, আগে ২০টির মতো স্পিডবোট ছিল। দর্শনার্থীরা বেশি আসায় নতুন করে স্পিডবোট নেমেছে সমুদ্রে।
সিডিএ সূত্র জানায়, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটিকে জোন-১ এবং জোন-২ এ বিভক্ত করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জোন-১–এর কাজ চলছে। এ জোনের অধীনে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটাপথ, বয়স্ক ও শিশুদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র এবং কিডস জোন, বিভিন্ন ধরনের মেকানিক্যাল ও নন-মেকানিক্যাল রাইডের কাজ চলছে। এ ছাড়া সুসজ্জিত বাগান এবং ক্যাবল কারের সংস্থান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে থাকছে বোটিংয়ের জন্য জেটি ও কার পার্কিং। রাতের সমুদ্রদর্শনের জন্যও থাকছে নানা আয়োজন। পুরো এলাকাজুড়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্যদিকে জোন-২ অঞ্চলে বিশদ পরিসের সৌন্দর্যবর্ধন, হোটেল-মোটেল, আধুনিক মানসম্পন্ন প্লাজা, সুসজ্জিত বাগান এবং টয় ট্রেনের ব্যবস্থা থাকবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। এ জন্য সমুদ্রসৈকতজুড়ে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দুটি জোনে লাখো পর্যটকের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে। চার স্তর থেকেই দেখা মিলবে সমুদ্রের সৌন্দর্য।