অন্যদেরও টিকা তৈরিতে সহায়তা করা উচিত: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের প্ল্যানারি পর্বে আগে ধারণকৃত ভাষণ দেন
ছবি: পিআইডি

কোভিড-১৯-এর টিকাকে সারা বিশ্বের গণমানুষের পণ্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণমানুষের পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশগুলোকে সর্বজনীন টিকার কভারেজ অর্জনের লক্ষ্যে অন্যদেরও টিকা তৈরি করতে সহায়তা করা উচিত।’

আজ মঙ্গলবার এশিয়ার জন্য বোয়াও ফোরামের (বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া—বিএফএ) সম্মেলনের প্ল্যানারি পর্বে প্রচারিত আগে ধারণ করা ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ন্যায়সংগতভাবে ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেকের টিকা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তৃত্বে বিশ্বাস করে।

প্রত্যেকেরই যাতে টিকা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা পূরণ হয়, সে লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কার্যকর করতে সব দেশের একত্রে কাজ করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ডব্লিউএইচও, জিএভিআই ও সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলো অবশ্যই সদস্যরাষ্ট্রের অধিকারকে সমর্থন করবে এবং ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংকটময় সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর তহবিলগুলোয় আরও বেশি প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।

করোনা মহামারি আমাদের মানবসভ্যতার সন্ধিক্ষণে বিশেষত ইতিহাসের চূড়ান্ত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই মহামারির আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাপক, যা ক্রমে প্রকাশিত হচ্ছে। সুতরাং, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারত্বকে আরও জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ মহামারির বিরূপ প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনীতিকে উৎসাহিত করার জন্য আমাদের জিডিপির প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।’

সার্ক, বিমসটেক, এসএএসইসি, বিবিআইএন ও বিসিআইএমের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও তার বাইরেও বহু মডেল সংযোগের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, বিআরআই এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মহাদেশে বিশাল জনসংখ্যার উপাত্ত, বিস্তৃত বাজার ও প্রযুক্তিগত প্রান্তের সুবিধা রয়েছে। কাজেই যদি আমরা হাত মিলাই, তাহলে উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করতে পারি, যা আমাদের প্রতিশ্রুত এসডিজি অর্জনে সহায়ক হবে। একে অপরের হাত বাড়িয়ে আমাদের ফোরআইআরের প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা বাড়ানো দরকার।’

বাংলাদেশ একটি অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং এ দেশের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্থান থেকে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দূর করতে বিভিন্ন অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো একক দেশ নিজেরা টিকে থাকতে পারে না বলেই দেশসমূহ ও অর্থনীতিকে একে অপরের সন্ধান করতে হবে। আসুন, একত্রে চিন্তা করি, একসঙ্গে কাজ করব। একসঙ্গে বেড়ে উঠব।’

প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি, আইএমএফের সভাপতি, বোয়াও ফোরামের মহাসচিবকে অভিনন্দন জানান।