অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পায়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ জায়গা ভাবা হয়। সেখানে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সারা দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। সিলেট এমসি কলেজে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ঘাটতির বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। এ নিয়ে দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের অভিমত, যাঁরা এমসি কলেজেরও প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

রাশেদা কে চৌধূরী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসা একজন নারীর ওপর যে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বিবেচনা করা হয়। অথচ সেখানে যে অপরাধ ঘটেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা পাচ্ছি না।

কত শত কৃতী মানুষ সিলেটের এমসি কলেজ তৈরি করেছে, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিখিয়েছে। আমি নিজেও এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী। কী পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে এই প্রতিষ্ঠানে, তা–ও আবার যখন করোনার কারণে ছাত্রাবাসে কারও থাকারই কথা নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে কেন এমন ঘটনা ঘটে, তা গভীরভাবে ভাবতে হবে।

কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা এখন সবাই জানে। সরকারে যে দল প্রতিনিধিত্ব করছে, তারা একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। আমার কাছে কষ্ট লাগে, সেই দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নাম নিয়ে এই ধরনের বর্বর কর্মকাণ্ড ঘটেছে। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। এখন কি তাহলে ছাত্ররাজনীতি বলতে টেন্ডারবাজিসহ এ ধরনের কর্মকাণ্ডকেই বোঝাবে? এসব অপরাধীকে শুধু দল থেকে বহিষ্কার যথেষ্ট নয়, দরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ দেব। ইতিমধ্যে কয়েকজন অপরাধীকে ধরেছে। সবাইকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। যে গোষ্ঠীটি এসব অপরাধ করছে, তারা আগে থেকেই আশপাশের গ্রামবাসীসহ ওই এলাকার মানুষকে তটস্থ করে রাখত। কলেজ প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটে চললেও আগে কেন বিচার হলো না? এই কলেজে ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, এর উত্তরণ ঘটাতে গেলে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এসব অপরাধীকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া। কিছু ঘটলে অস্বীকার করা এবং পরস্পর দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

দেখা যায়, অপরাধীরা বিভিন্ন সময়েই রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে থাকে। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এখানে আরেকটি কথা বলতে চাই, সেটি হলো এই অপরাধীরা পালিয়ে গিয়ে কোথায় ছিল? আত্মীয়স্বজনের প্রশ্রয়েই ছিল। তাহলে অভিভাবকদেরও মূল্যবোধ কোথায় গেছে? অভিভাবকদের তো উচিত ছিল অপরাধীদের ধরিয়ে দেওয়া। কিন্তু সেটা তো হলো না।

এখন শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষানির্ভর। নীতি–নৈতিকতা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বিতাড়িত। সেটাও গভীরভাবে ভাবতে হবে। এমসি কলেজে যারা এই জঘন্য অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। যদি তাদের বিচার না হয়, তাহলে রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে যাবে।