অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ঝুঁকি বাড়ায়

অপরিকল্পিত গর্ভধারণ মা ও নবজাতকের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। করোনাকালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের নেতিবাচক মনোভাব দূর করে পরিকল্পিত পরিবার গঠনে লোকজনকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে বলে মত দিয়েছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের আগে কোন পদ্ধতির কার্যকারিতা কেমন, তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে দম্পতিদের। হরদম ‘ইমার্জেন্সি পিল’ ব্যবহার না করার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস উপলক্ষে শনিবার নুভিস্তা ফার্মা লিমিটেড আয়োজিত ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। এতে অংশ নেন প্রসূতি ও  স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, দুই সাবেক সভাপতি অধ্যাপক লায়লা আর্জুমান্দ বানু ও অধ্যাপক রওশন আরা বেগম, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দক্ষিণ এশীয় সংগঠন সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অবসটেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজির (সাফোগ) সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন নাতাশা খুরশিদ। ওয়েবিনারের সম্প্রচার সহযোগী ছিল প্রথম আলো।

পরিকল্পিত পরিবার গঠনের ওপর জোর দিয়ে অধ্যাপক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘যেকোনো দুর্যোগে জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা না পেয়ে অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ঝুঁকি দেখা দেয়। এ কারণে করোনাকালের শুরুতে আমরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানাই। মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এড়াতে হবে।’

সরকারের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সেবার বিষয়ে লায়লা আর্জুমান্দ বানু বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো খাওয়ার বড়ি। এ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে কনডম, দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি ইনজেকটেবল, নারী বন্ধ্যাকরণ, পুরুষ বন্ধ্যকরণ, ইমপ্লান্ট, জরায়ুতে স্থাপন উপযোগী ইন্ট্রা-ডিভাইস (আইইউডি-যা কপার টি নামেও পরিচিত)। তিনি জানান, করোনাকালে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছিল। অনেকেই সেবা পাচ্ছিলেন না।
বিভিন্ন মেয়াদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আছে উল্লেখ করে অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী বলেন, স্বল্প মেয়াদে খাওয়ার বড়ি বা কনডমের ক্ষেত্রে নিয়মিত হতে হবে। তা না হলে একদিনের ভুলেই গর্ভধারণ হয়ে যায়। এখন দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির ওপর সরকার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের খাওয়ার বড়ি বেশ ভালো। এতে খুব সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। গর্ভধারণের আগে শরীরকে প্রস্তুত করতে অন্তত তিন মাস আগে ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে। চতুর্থ প্রজন্মের বড়িতে ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। করোনাকালে গর্ভধারণ না করে সেই প্রস্তুতিই নেওয়া প্রয়োজন।

খাওয়ার বড়ির ক্ষেত্রে অনেকের যেসব নেতিবাচক ধারণা রয়েছে তা বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম। তিনি বলেন, খাওয়ার বড়িতে প্রথম মাসে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও পরে তা ঠিক হয়ে যায়। প্রথম সন্তানের পর দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই থেকে পাঁচ বছরের বিরতি থাকা উচিত। স্বল্প মেয়াদি বা স্থায়ী যেকোনো পদ্ধতির ক্ষেত্রে পদ্ধতি বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গেই গর্ভধারণ করা যায়।

ইমার্জেন্সি পিল বা জরুরি বড়ি শুধু জরুরি সময়েই খাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানান, ইমার্জেন্সি পিল মাসে বড়জোর একবার সেবন করা যাবে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণ হতে পারে মনে করলে শারীরিক সম্পর্কের পর সেবন করতে হবে। যখন-তখন হরদম ব্যবহার করলে মাসিক অনিয়মিত হওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৪০ বছরের বেশি বয়সী এবং বুকের দুধ খায় এমন সন্তানদের মায়েদের খাওয়ার বড়ি ব্যবহার না করে অন্য পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানান, সন্তান জন্মের পর বুকের দুধ খায় এমন সন্তানের ক্ষেত্রে ছয় সপ্তাহ থেকে গর্ভধারণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘প্রোজেস্টেরন অনলি’ খাওয়ার বড়ি খাওয়া যেতে পারে। সাধারণ বড়িতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন থাকে। চতুর্থ প্রজন্মের বড়িতে এ দুটি হরমোন স্বল্প মাত্রায় থাকে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।