অবশেষে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেন খুদ বানু

বয়স্ক ভাতার কার্ড হাতে শতবর্ষী খুদ বানু
বয়স্ক ভাতার কার্ড হাতে শতবর্ষী খুদ বানু

অবশেষে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছেন নেত্রকোনার মদনের শতবর্ষী বৃদ্ধা খুদ বানু। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইউএনও মো. ওয়ালীউল হাসান ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিশেষ ব্যবস্থায় তাঁর হাতে বয়স্ক ভাতার এ কার্ড তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁকে আর্থিক সহযোগিতাও করা হয়েছে।

এ সময় মদন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনসহ এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

খুদ বানুর বাড়ি উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের শিবাশ্রম গ্রামে। তিনি গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের স্ত্রী। তাঁর বয়স এক শ পেরিয়েছে এক দশক আগেই। বর্তমানে তিনি ১১২ বছর পার করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। কিন্তু গতকালের আগে তাঁর নাম বয়স্ক ভাতার তালিকায় ওঠেনি।

সমাজসেবা কাযালয়ের তথ্য বলছে, বয়স্ক ভাতা পেতে নারীর জন্য বয়স ৬২ ও পুরুষের জন্য ৬৫ বছর হওয়া প্রয়োজন। সে হিসেবে খুদ বানুর প্রায় ৫০ বছর আগে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা ছিল। অবশ্য বাংলাদেশে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে প্রথম ‘বয়স্ক ভাতা’ কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়।

ইউএনও মো. ওয়ালী হাসান বলেন, ‘ওনার সম্পর্কে (খুদ বানু) আগে কিছুই জানতাম না। বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর জানতে পারি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বয়স্ক ভার্তার কার্ড দেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুদ বানুর আপনজন ও সহায়সম্বল বলতে কিছু নেই। ৫০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। বয়সের ভারে অনেক আগেই কর্মশক্তি হারালেও পেটের ক্ষুধা মেটাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে চলতে হয় তাঁকে। মাঝেমধ্যে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে তাঁর দুর্গতির আর শেষ থাকে না।

একসময় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকলে শিবাশ্রম গ্রামের সবুজ মিয়া নামের এক ব্যক্তির জায়গায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে খুদ বানুকে ছোট্ট একটি ছাপরা তৈরি করে দেওয়া হয়। সাত-আট বছর ধরে ওই ঘরেই বসবাস করছেন তিনি। কিন্তু ওই ঘরটিও বর্তমানে বসবাসের তেমন উপযোগী নয়। জরাজীর্ণ ঘরের চারদিকে আগাছায় ভরে গেছে।

খুদ বানুকে মাঝেমধ্যে দেখাশোনা করেন পাশের বাড়ির জমিলা খাতুন (৭০)। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক কষ্ট করছেন বাক্প্রতিবন্ধী খুদ বানু। বর্তমানে তাঁর চোখের দৃষ্টি কমে আসছে। চর্মরোগসহ বয়সজনিত নানা অসুখ তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে। টাকার অভাবে চিকিৎসাও নিতে পারেন না।

জমিলার দাবি, তাঁর বয়স যখন ১০ বছর, তখন খুদ বানুর বয়স ছিল ৫২ বছর। সে হিসাবে খুদ বানুর বয়স বর্তমানে ১১২ বছর। অবশ্য খুদ বানুর ভোটার আইডিতে বয়স কত লেখা তা জানা যায়নি। ওই কার্ডটি কোথায় রাখা আছে, তা-ও জানা নেই। একই গ্রামের আবদুল কাদের (৬৮) বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই ওনাকে এমনই দেখে আসছি। তাঁর বয়স বর্তমানে ১১৫ বছরের নিচে হবে না। এই পৃথিবীতে ওনার আপন বলতে কেউ নেই। একসময় সব ছিল কিন্তু এখন নিঃস্ব।’

কাইটাইল ইউপি চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ রয়েল জানান, তিনি নিঃস্ব খুদ বানুকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েকজন জানিয়েছিলেন, এই কার্ডের টাকা অন্য লোকজন নিয়ে যাবে। তাই আর দেওয়া হয়নি।