অবেদনবিদ নেই, এক্স-রে যন্ত্র পড়ে আছে ১৯ বছর

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয় বছর ধরে অবেদনবিদ (অ্যানিসথেটিস্ট) ও সাড়ে তিন বছর ধরে গাইনি চিকিৎসক নেই। ফলে হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ।
এ ছাড়া স্থাপনের পর থেকেই টেকনোলজিস্টের অভাবে প্রায় ১৯ বছর ধরে অকেজো পড়ে আছে এক্স-রে যন্ত্রটি। এ অবস্থায় ধনীরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারলেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দরিদ্র সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখানে কোনোমতে বদলি করে গাইনি চিকিৎসক ও অবেদনবিদ পাঠালেও তাঁরা মফস্বল এলাকায় থাকতে চান না। আরও ওপর মহলে তদবির করে তাঁরা জেলা সদর অথবা পৌর এলাকার কোনো হাসপাতালে বদলি হয়ে চলে যান। এটা একটা বড় সমস্যা।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে গত ৩০ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেখা হয় অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর স্বামী মো. আবদুলের সঙ্গে। তিনি পেশায় রিকশাচালক। স্ত্রী মিনারা বেগমকে নিয়ে এসেছিলেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখান থেকে জানানো হয়েছে অস্ত্রোপচার লাগবে। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি চিকিৎসক ও অবেদনবিদ না থাকায় রোগীকে জেলা সদর হাসপাতাল অথবা অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এতে বিপাকে পড়েছেন স্বামী আবদুল। তিনি বললেন, ‘আসপাতালে ডাক্তার নাই। পেরাইভেটে (বেসরকারি হাসপাতাল) অপারেশন করাইতে কইছে। হে তো অনেক টেখার (টাকা) দরকার। কিতা করতাম বুঝিয়ার না।’
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে অবেদনবিদের পদটি শূন্য। দুই বছর কাজ করার পর গাইনি চিকিৎসক রহিমা আক্তার বেগমও ২০১১ সালের ১ জুন থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ১৯৯৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এক্স-রে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু টেকনোলজিস্ট নেই। তাই আজও সেটি চালু করা যায়নি। অথচ এ হাসপাতালে শুধু কুলাউড়া নয়, পাশের জুড়ী উপজেলার লোকজনও চিকিৎসাসেবা নেন। কুলাউড়ার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় চার লাখ ও জুড়ীর ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ চিকিৎসার জন্য এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর নির্ভরশীল।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম ৩ ডিসেম্বর মুঠোফোনে বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বর মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ভিডিও কনফারেন্স হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে জেলার সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভালো বলে জানান সিভিল সার্জন। ওই সময় তিনি (সিভিল সার্জন) কুলাউড়ার সমস্যার কথা কেন বললেন না, বুঝলাম না।’
চেয়ারম্যান কামরুল আরও বলেন, ‘উপজেলা সদরে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল আছে। সেখানকার ব্যয় ধনীরা বহন করতে পারলেও দরিদ্র লোকজনের পক্ষে তা কঠিন।’
সিভিল সার্জন এ টি এম মতিউর রহমান বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত সবকিছু বলা যায়নি। কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় লোকবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হবে।’