অভিনন্দন, প্রথম আলো

আকবর আলি খান

লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যান্টার বাংলাদেশে যে জাতীয় গণমাধ্যম জরিপ করেছে, তাতে প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকা প্রতিদিন ৫০ লাখ পাঠক পড়েন বলে তথ্য বেরিয়েছে। এটি অত্যন্ত খুশির খবর। প্রথম আলোকে আমি অভিনন্দন জানাই। এই তথ্য অন্য পত্রিকার জন্যও প্রেরণাদায়ক হবে।

পৃথিবীজুড়েই ছাপা পত্রিকা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অনেক পত্রিকার মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ক্যান্টারের জরিপের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে আপাতত ছাপা পত্রিকার ভয় নেই। অন্তত আগামী ২০ থেকে ২৫ বছর এর চাহিদা অটুট থাকবে বলে আশা করি।

আমরা ছাপা পত্রিকা পড়তেই অভ্যস্ত। সকালে পত্রিকা না পেলে অস্বস্তি লাগে। ছাপা পত্রিকার জন্য প্রথম অসুবিধা হচ্ছে, পাঠক এখন কাগজবিহীন মাধ্যমেই তথ্য পেয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, ছাপা পত্রিকার কাগজ, মুদ্রণ ও পরিবহন ব্যয়। তারপরও আমি আনন্দিত যে প্রথম আলো অনলাইনের পাশাপাশি ছাপা পত্রিকায়ও পাঠক ধরে রাখতে পারছে। এর কারণ, প্রথম আলো কেবল রাজনীতির খবর দিচ্ছে না, ব্যবসা-বাণিজ্য, ছাত্র-তরুণসহ সব জনগোষ্ঠীর খবর দিচ্ছে। সব শ্রেণি–পেশার মানুষের কথা তুলে আনার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে যত বিশেষজ্ঞ মহল আছে, তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর রাখার কাজটি ভবিষ্যতে প্রথম আলো কত ভালোভাবে করতে পারে, তার ওপরই এর সাফল্য নির্ভর করবে।

আমি প্রতিদিন বেশ কয়েকটি পত্রিকা পড়ি। কিন্তু প্রথম আলো না পড়লে মনে হয় সকালটা সম্পূর্ণ হয়নি। প্রথম আলোর পাঠকপ্রিয়তার অন্যতম কারণ বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে খবর পরিবেশন; রাজনৈতিক খবরের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা, যদিও আমাদের দেশে কাজটি করা বেশ কঠিন। দ্বিতীয়ত, প্রথম আলোয় দেশি-বিদেশি লেখকদের যেসব কলাম প্রকাশিত হয়, তা চিন্তার খোরাক জোগায়।

আমার প্রত্যাশা থাকবে ছাপা পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে। বাংলা ভাষা প্রমিতকরণের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা আছে। প্রথম আলো প্রমিতকরণে কিছু কিছু কাজ করেছে। তাদের এই ধারা অব্যাহত থাকুক। পরিভাষা বিকাশেও প্রথম আলোর ভূমিকা রাখার প্রভূত সুযোগ আছে।

আমরা কৃষিপ্রধান সমাজ থেকে নগরভিত্তিক সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছি দু-তিন দশক হলো। প্রত্যেক পাঠক যাতে একাত্মবোধ করতে পারেন, সে জন্য এই রূপান্তরকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। গ্রাম ও শহরের তুলনামূলক চিত্র দেখতে চাইবে পাঠক।

সর্বশেষে বলব, আমাদের দেশে বেশির ভাগ সংবাদপত্রে খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকে না, পেছনের ঘটনা তুলে ধরা হয় না। এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে প্রথম আলোর মহাফেজখানাকে আরও ঋদ্ধ করতে হবে। প্রথম আলো সব ধরনের পাঠককে আকৃষ্ট করতে চাইলে শ্রেণি, পেশা ও অবস্থাননির্বিশেষে সবার চাহিদা নিরূপণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নও প্রয়োজন।

আকবর আলি খান: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব