অসাধু পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

‘পুলিশ আক্রমণকারী নয়; বরং রক্ষাকারী’ হিসেবে জনসাধারণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময় বলে হাইকোর্টের এক রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজধানীর পল্লবী থানার মাদকের এক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভুলভাবে কারাগারে থাকা মো. আরমানকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে ওই পর্যবেক্ষণ এসেছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। রায়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরমানকে ৩০ দিনের মধ্যে ২০ লাখ টাকা দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আজ মঙ্গলবার হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির।

পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যাদের এই দেশের নিরীহ নাগরিকের জীবন সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করার কথা, তাদের মধ্যে মুষ্টিমেয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা ভুল পথে ধাবিত এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক ওই ঘটনায় ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা তাঁদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। বিবাদীর (পল্লবী থানার ওসি) দাখিল করা তথ্যাদি দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করে যে কিছু লোভী ও দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আরমানকে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয়।

রায়ে বলা হয়, পুলিশের এ অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে; যাতে বাহিনীর শৃঙ্খলা নষ্টে কেউ সাহস না পায় এবং নিরীহ জনসাধারণের ক্ষতি না করতে পারে।

‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি যুক্ত করে আরমানকে বেআইনিভাবে আটক রাখার বৈধতা নিয়ে তাঁর মা বানু ওই বছরই হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে পল্লবী থানার সাবেক চার পুলিশ সদস্যকে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে যুক্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এদিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরমানকে ২০ লাখ টাকা দিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। ওই নির্দেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী আরমানের মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিপূরণ বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
আইনজীবী হুমায়ন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে আরমান কারাগারে আছেন। চেম্বার আদালত ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত করেছেন, তবে তাঁর মুক্তির আদেশ স্থগিত হয়নি। আরমান এখন কাশিমপুর কারাগার-২–এ আছেন। আশা করছি, তিনি শিগগিরই মুক্তি পাবেন।’

আরও পড়ুন