অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড ও ম্যালকম টার্নবুল
ছবি: রাডের টুইট

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাডের করা একটি ই-পিটিশনে বাংলাদেশি এক হাজার ভুয়া স্বাক্ষর থাকার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলেও উল্লেখ করেছেন।

মূলত দেশটির দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশি এক হাজার ভুয়া স্বাক্ষর থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগটির নিন্দা জানিয়ে কয়েক দিন ধরেই দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।

গত বুধবার দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকা ‘মিডিয়া রয়েল কমিশন পিটিশনে কেভিন রাডের বাংলাদেশি বট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়, পিটিশনে দেওয়া এক হাজারেরও বেশি স্বাক্ষর ভুয়া এবং অর্থের বিনিময়ে বিদেশি মুক্তপেশাজীবীর মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে রয়েল কমিশন বসানোর আহ্বান জানিয়ে এ পিটিশন জারি করেন। তাঁর এ ই-পিটিশনে রেকর্ডভাঙা পাঁচ লাখ স্বাক্ষর জমা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় ই-পিটিশন এবং তৃতীয় বৃহত্তম পিটিশন।

দ্য টার্নকোস্ট নামের একজন গোপন অপরাধ ফাঁসকারীর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করেই মূলত এ বিভ্রান্তির সৃষ্টি। ভিডিওটিতে দেখানো হয় কীভাবে ভুয়া স্বাক্ষর প্রদান করা সম্ভব। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে এক হাজার জাল স্বাক্ষরকারী তৈরি করে জাতীয় সংসদের ই-পিটিশন ব্যবস্থা কতটুকু অরক্ষিত, সেটা পরীক্ষা করে দেখানো। সেখানে তিনি প্রথমে নিজেই একটি ভুয়া স্বাক্ষর দেওয়ার প্রমাণ দেখালেও নিজে এবং কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে শতাধিক জাল স্বাক্ষর দেওয়ার দাবি করেন। এরপর ভিডিওটিতে একজন চীনা মুক্তপেশাদারকে ৫৮ অস্ট্রেলীয় ডলারের বিনিময়ে এক হাজার ভুয়া স্বাক্ষর তৈরি করে দেওয়ার কাজ দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করা হয়। যদিও এর কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি। পরবর্তী সময়ে দ্য টার্নকোস্টের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে বলা হয়, ‘আপডেট: এক তৃতীয় পক্ষের তদন্তের পর জানা গেছে সেই মুক্তপেশাজীবী বাংলাদেশি, চীনা নয়’। যদিও তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করা হয়নি।

‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশি ১ হাজার ভুয়া স্বাক্ষর থাকার অভিযোগ তোলা হয়
ছবি: সংগৃহীত

কুইন্সল্যান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিজিটাল যোগাযোগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ড্যানিয়েল অ্যাঙ্গাস বলেন, দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনটি একটি জঘন্য এবং ‘সারবস্তু বিহীন’। তিনি জানান, এখানে তাদের পরিষ্কারভাবে ব্যক্তিস্বার্থ আছে। তারা চেষ্টা করছে জনগণের মধ্যে মতপ্রকাশের বৈধতাকে দুর্বল করতে। অস্ট্রেলিয়ার দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড ও ম্যালকম টার্নবুল দাবি করেন, দেশটির সংবাদমাধ্যমে পক্ষপাতিত্বের সমস্যা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ৭০ শতাংশ মুদ্রণমাধ্যমের মালিকানাই নিউজ কর্প প্রতিষ্ঠানের রুপার্ট মার্ডকের। আর এ জন্যই দেশটির গণমাধ্যমে স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতেই রয়েল কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে পিটিশন জারি করেন কেভিন রাড। কোনো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগে রাষ্ট্রীয় তদন্তকেই সাধারণ অর্থে রয়েল কমিশন বলা হয়।