অস্থিতিশীল এলএনজি বাজারের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ: আইইইএফএ

বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দিকে ঝোঁকা ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো উদীয়মান বাজারগুলো অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি দাম এবং অস্থিতিশীল এলএনজি বাজারের মুখোমুখি হতে পারে। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে।

আইইইএফএ মূলত জ্বালানি বাজার, প্রবণতা এবং নীতি–সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিরীক্ষা করে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও লাভজনক জ্বালানি অর্থনীতির দিকে বৈশ্বিক যাত্রাকে ত্বরান্বিত করা। আইইইএফএর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে।

আইইইএফএর বিশ্লেষক ব্রুস রবার্টসনের মতে, উদীয়মান বাজারগুলোতে গ্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় এসব দেশে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এলএনজি আমদানি বাতিল হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

রবার্টসন মনে করেন, উত্তর গোলার্ধের বেশির ভাগ দেশে চরম ঠান্ডা আবহাওয়ায় তাপের জন্য গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে এশিয়ান এলএনজির চাহিদা মৌসুমের প্রত্যাশিত চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে এশিয়ান এলএনজির দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বের বৃহত্তম তিনটি এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহের বিঘ্ন এবং উচ্চ পরিবহন খরচ গ্যাসের দামকে আরও প্রভাবিত করছে।

দাম নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্যাটস জানিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমবিটিইউ) এলএনজি সরবরাহের গড় মূল্য ধরা হয়েছে ২১ দশমিক ৪৫ মার্কিন ডলার, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি (১৪ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার, সূত্র: রয়টার্স)।

অস্ট্রেলিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউ জানিয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় গর্গন প্রকল্পের একটি স্পট এলএনজি কার্গো প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট ৩৭ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা প্রায় ছয় মাসে আগে বিক্রি হওয়া দামের চেয়ে ১৮ গুণ বেশি।

আইইইএফএ বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, সাম্প্রতিক স্পট এলএনজির মূল্যে অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান তাদের দরপত্র বাতিল করেছে। উদীয়মান বাজারগুলো মূলত মূল্য সংবেদনশীল। আসন্ন গ্যাসের অস্থির বাজার তাদের আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা দেখা গেছে। এলএনজির দাম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ব্যয়বহুল ও অনিশ্চিত করে তুলবে। ফলে এলএনজিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে পারে এবং গ্রাহকদের ওপর গ্যাস ও বিদ্যুতের দামের বোঝা আরও বেড়ে যেতে পারে।

রবার্টসনের মতে, সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি ভবিষ্যতে অস্থিতিশীল গ্যাসের দামের পূর্বাভাস হতে পারে। নতুন গ্যাসের কূপ খনন কম হওয়া, তেল ও গ্যাসশিল্পে আর্থিক অস্থিতিশীলতা এবং শিল্প বিনিয়োগের নিম্ন হারের কারণে উচ্চ মূল্য এবং আরও অস্থিতিশীল বাজারের নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

রবার্টসন পূর্বাভাস দিয়েছেন, মার্কিন গ্যাসের বাজারে অস্থিরতার মানে হতে পারে, আসন্ন বছরগুলোতে এশিয়ান এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা। এশিয়ার দেশগুলোর উচিত এলএনজির চেয়ে সস্তা, আরও স্থিতিশীল নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়া।