আইন মানলে কী পরিস্থিতি হয়, দেখতে ট্রাফিক পক্ষ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রথম আলো ফাইল ছবি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রথম আলো ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রাজধানীতে চালক, মালিক, যাত্রী ও পথচারীরা যদি আইন মেনে চলেন, তবে কী পরিস্থিতি হয়, তা দেখতে ১৫ দিনব্যাপী ট্রাফিক পক্ষ পালন করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ-২০১৯’-এর উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা ট্রাফিক আইন মেনে চলি। এতে করে দুর্বিষহ যানজট কমে যাবে বলে আমরা অনেকেই উপলব্ধি করি। ১৫ থেকে ৩১ জানুয়ারি ঢাকাবাসীসহ সারা দেশের মানুষকে আইন ও নিয়ম মেনে চলতে সচেতন করব। আইন মেনে চললে পরিস্থিতিটা কী রকম হয়, সেটা দেখাতে চাই। কতটা আরামদায়ক ও স্বস্তিদায়ক হয়, কতটা সময় বাঁচাতে পারেন, আমরা সেই কাজই করছি।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অহেতুক দুজন চালকের বেপরোয়া গতি, দায়িত্বহীন, কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে দুজন ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। ওই ঘটনায় অনেকের চোখ খুলেছিল। আমরা অনেক সচেতন হয়েছিলাম, সেটাই মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছি। মানুষ যেন ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন, আন্ডারপাস ব্যবহার করেন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করেন, অহেতুক দৌড়ে রাস্তা পার না হন—এ কথাগুলোই বোঝাতে চাচ্ছি। মাঝেমধ্যে কিছু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। কয়েক মাস আগেও মোটরসাইকেলে কারও হেলমেট ছিল না, এখন হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল পাওয়া যায় না। আমরা বোঝাতে চাই, আগে যাওয়ার চেয়ে সময়মতো যাওয়াটা মূল্যবান।’

ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ উপলক্ষে আজ সকাল থেকেই রাজধানীতে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। জায়গায় জায়গায় তল্লাশি চলেছে।

ট্রাফিক পক্ষ উদ্বোধনের সময় রাজধানীতে মোট ৫৭টি তল্লাশিচৌকি স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ইতিমধ্যে নগরের ১৩০টি বাস স্টপেজ চিহ্নিত করা হয়েছে। সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। স্টপেজগুলো সুন্দর করতে সিটি করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। সেগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।’

আছাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, ঢাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সড়কের যে গতি কমেছে, তা সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভিআইপি রাস্তাগুলোতে এমআরটি (ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন এই যানজট সহনশীল রাখাটা একটা মোটামুটি চ্যালেঞ্জ। এ জন্য ট্রাফিক পুলিশের সাড়ে ৪ হাজার সদস্য সারা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যানজট সহনশীল রেখেছি, তবে জনগণের প্রত্যাশার কাছে যেতে পারেনি। কারণ, গাড়ির আধিক্য, রাস্তার নানাবিধ সমস্যা ও আইন না মানার অপসংস্কৃতি। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো সম্পন্ন হলে আমাদের দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। আমরা আইন প্রয়োগ করছি এবং করব। কিন্তু এটি সমাধান নয়। সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে শত সমস্যারও ধীরে ধীরে সমাধান হয়ে আসবে।’

ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ পালনের পর পুলিশ নগরের ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযানে নামবে বলে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার। উবার-পাঠাওসহ বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং অ্যাপসের যানবাহনগুলোও নিয়ন্ত্রণে আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নয়নে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে:

১। ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেট, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, গাইড বই বিতরণ।

২। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্মানিত সদস্যদের নিয়ে ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠানের আয়োজন।

৩। রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্ল গাইড, বিএনসিসি সদস্যদের ট্রাফিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা।

৪। ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের সঙ্গে সমন্বয় করে অবশিষ্ট জেব্রা ক্রসিং/রোড মার্কিংগুলো দৃশ্যমান/স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৫। মূল সড়কের পাশে অবস্থিত স্কুল-কলেজের ক্লাস শুরু এবং ছুটির সময়ে ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল-কলেজের ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা এবং এসব অঞ্চলে যথাযথ ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা।

৬। হাইড্রোলিক হর্ন, দ্রুতগতির যানবাহন, বেপরোয়া গতি, হুটার, বিকন লাইট, উল্টো পথে চলাচল এবং মোটরসাইকেলের আরোহীদের হেলমেটসহ সব ধরনের ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিশেষ ট্রাফিক অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৭। ঢাকা মহানগরী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ২৯টি পয়েন্টে চেকপোস্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৮। ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধকরণে পুলিশ সদস্য মোতায়েন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

৯। গাড়ি চালানোর সময় স্টপেজ ছাড়া সব সময় গাড়ির দরজা বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া।

১০। জেব্রা ক্রসিং এর আগে Stop লাইন বরাবর গাড়ি থামানো এবং স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি থামানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাম লেন ঘেঁষে নির্ধারিত স্টপেজে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা নিশ্চিত করা।

১১। ভিডিও মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

১২। এর আগে মডেল করিডর হিসেবে ঘোষিত বিমানবন্দর থেকে শহীদ জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরোনো হাইকোর্ট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভিআইপি সড়কের ইন্টারসেকশনগুলোতে রিমোট কন্ট্রোল সরবরাহ নিশ্চিত করে স্বয়ংক্রিয় ও রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সিগন্যাল পরিচালনা করা।