অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা সম্প্রতি প্রথম আলোকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন। আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল করোনার অতিমারি এবং এর আর্থসামাজিক প্রভাব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শওকত হোসেন ও পার্থ শঙ্কর সাহা।
প্রশ্ন :
করোনা সংক্রমণের ছয় মাস পার হয়েছে। আমরা করোনার অতিমারির মধ্যে আছি। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা কী দেখলেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আমরা অপ্রস্তুত হয়ে সংকটে ঢুকেছি। সরকার প্রস্তুত ছিল না, মানুষও। ফলে প্রথম দিকে সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকগুলো ধারণাগত ভুল দিয়ে আমাদের শুরু। সরকার কী করবে, বুঝে উঠতে পারছিল না। ধারণাগত সংকট আরও অনেক দেশেই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে বড় ব্যর্থতাটা হয়েছে যোগাযোগে। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা ছিল না, দিকনির্দেশনাও না। মে মাসের সূচনা পর্যন্ত কেটেছে অনিশ্চয়তায়। অর্থনৈতিক ধাক্কাটাও শুরু হলো সে সময়। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে মানুষের মনে হলো, কিছুই তো পাচ্ছি না, নিজেদের ওপরই নির্ভর করতে হবে। সরকারও মনে করল, স্বাস্থ্যের পুরো বিষয়টি ম্যানেজ করা কঠিন হবে। অর্থনীতিতেই নজর দিতে হবে।
প্রশ্ন :
ছয় মাস শেষ করে আপনার কাছে স্বাস্থ্য খাতের মূল্যায়নটা কেমন?
হোসেন জিল্লুর: স্বাস্থ্য খাতে সুচিন্তিত কোনো কার্যক্রম ছিল না। সরকারের প্রস্তুতি ছিল না। পরে তাদের ভূমিকা অনেকটা এ রকম ছিল যে এভাবেই যতটা চলে চলুক। ব্যক্তিমালিকানাধীন স্বাস্থ্য খাত শুরু থেকেই হাত গুটিয়ে থাকল। করোনাবহির্ভূত স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ল। করোনার প্রতিরোধে তিনটি ব্যবস্থার কথা বলা হলো। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা এবং হাত ধোয়া। আমাদের দেশের যে অবস্থা, সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা প্রায় অসম্ভব। তবে বাকি দুটি বিষয়ে কিছুটা সচেতনতা দেখা গেছে। শুরুতে অর্থনীতির ধাক্কা তীব্র ছিল। মে মাসের শুরুর দিকে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের চেষ্টা হলো, বিশেষ করে দরিদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে। শুরুতে তৈরি পোশাক খাত দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত খাতটি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। সব মিলিয়ে আমাদের বড় কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রস্তুতি থাকলে সেটা কম হতো।
প্রশ্ন :
আমাদের মুখ্য সংকট এখন কী কী?
হোসেন জিল্লুর: এই করোনাকালে চারটি সংকট খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রথমটি হলো স্বাস্থ্য সংকট। এর আবার দুটি রূপ। একটি করোনাকেন্দ্রিক। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাটা যে ফাঁপা, কোভিড তা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সংকট সামাল দেওয়া দূরের কথা, আমাদের এখানে স্বাভাবিক সেবার ঘাটতিই বিশাল। এর ভুক্তভোগী শুধু দরিদ্ররাই হয়নি, ধনী-নির্ধন সবাই বিপদে পড়েছে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিষেবায় সংকট দেখা গেছে।
করোনার মধ্যে স্বাস্থ্য সংকটের ভীতিটিই ছিল সবচেয়ে বড়। ভীতি কিছুটা মুক্ত হয়েছি, তবে স্বাস্থ্য সংকট রয়েই গেছে। এখন শুরু হয়েছে পরিসংখ্যান নিয়ে দোলাচল। সংক্রমণ, মৃত্যু—এসবের যথাযথ তথ্য আমরা জানি না। এটি স্বাস্থ্য ও করোনাকালের স্বাস্থ্য সংকটকে জটিল করে তুলছে। স্বাস্থ্যের বেশ কিছু সূচক নিয়ে আমরা বেশ সন্তুষ্ট ছিলাম। ওই সূচকগুলো যে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যুগের সূচক সেটা আমরা খেয়াল করি না। আমাদের শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে—এগুলো তো অতীতের অর্জন। স্বাস্থ্যসেবার যে সংকট—যেমন মাতৃমৃত্যুর হার—সেটি তো স্থবির হয়ে আছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার স্থবির হয়ে আছে।
প্রশ্ন :
দ্বিতীয় বড় সংকটটা কি অর্থনীতির?
হোসেন জিল্লুর: হ্যাঁ। অর্থনৈতিক সংকটের দুটি দিক আছে। একটি স্বল্পকালীন। মার্চে যখন সরকার সব বন্ধ করে দিল, তখন রিকশাওয়ালাদের মতো মানুষের সপ্তাহ দুয়েকের আয়রোজগার বন্ধ হয়ে গেল। নিম্ন আয়ের প্রায় সবাই সংকটে পড়ে গেল। সাময়িক এই সংকটের প্রাথমিক ধাক্কা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। মানুষের কাজের পুনরুদ্ধারের ফলে এটা হয়েছে। তবে অবস্থার খুব পরিবর্তন হয়নি। গবেষণায় আমরা দেখেছি, কোভিডের আগের সময়ের তুলনায় জুন–জুলাই মাসে মানুষের আয় ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ কমে গেছে। এই সংকট এখনো রয়ে গেছে।
অর্থনৈতিক সংকটের কিছু মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিষয়ও আছে। বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগের প্রধান ক্ষেত্র তৈরি পোশাক খাতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ এখানে ভালো ভূমিকা রেখেছে। আবার প্রবাসী আয় নিয়ে একটি রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসী আয় বেড়েছে বটে, কিন্তু মানুষ সেখান থেকে চলে আসার আগে সবকিছু পাঠিয়ে দিচ্ছে কি না, সেটা বিচার্য বিষয়। কারণ, শ্রমবাজারের অবস্থা দেখলে আমরা আশান্বিত হতে পারছি না। মধ্য মেয়াদে প্রবাসী আয় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে।
এখন আসি দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে। গত এক দশকে আমরা প্রবাসী আয় ও তৈরি পোশাকশিল্পকে সঙ্গী করে প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার ধরে এগোচ্ছিলাম। আগামী দিনের প্রবৃদ্ধির চালক আসলে কী হবে, করোনা সেই জটিল প্রশ্নের মুখে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির মধ্যে খুঁজতে হবে।
প্রশ্ন :
সেটা কীভাবে সম্ভব? অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি কী হতে পারে?
হোসেন জিল্লুর: গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে। এটা হতে পারে আমাদের অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি। ১৯৯০–এর দশকে গ্রামীণ অকৃষি খাত নিয়ে যে আলোচনা ছিল, গত এক দশকে তা ততটা হয়নি। এই খাতকে অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি করে তুলতে হবে। কৃষি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। করোনা আবার আমাদের কৃষকদের সহনশীলতার প্রমাণ হাজির করেছে। এবার ভালো ফসল হয়েছে। কিন্তু আগের মতোই কৃষক দামে সহায়তা পায়নি।
প্রশ্ন :
নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর করোনা সংকটের প্রভাব নিয়ে একাধিকবার গবেষণা করেছেন? সেসবে কি সংকটের কোনো নতুন রূপ আপনারা দেখেছেন?
হোসেন জিল্লুর: দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে আমরা এত দিন যে জিনিসগুলো বুঝতাম, তার মধ্যে একটা সমস্যা দেখছি। সরকারি হিসাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। আগে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আমরা দুইভাবে ভাগ করতাম। একটি দারিদ্র্যসীমার নিচে, আরেকটি ওপরে। দারিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরে যারা ছিল, করোনাকালে তারা নিচে পড়ে গেছে। এদের আমরা বলছি ‘নতুন দরিদ্র’। জুন–জুলাইয়ে দেখেছি, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। সরকারি পর্যায়েও এখন দরিদ্রের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ বলা হচ্ছে। অর্থাৎ নতুন দরিদ্রের বিষয়টি এখন সরকারি পর্যায়েও বিচার্য বিষয়। আমরা ভেবেছিলাম, দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠলেই হয়ে গেল। কিন্তু দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠলেও ঝুঁকি থাকতে পারে, আমরা তা ভাবিনি। এখন আমরা বুঝতে পেরেছি, অনানুষ্ঠানিক খাতে জড়িত দরিদ্র মানুষের কোনো সুরক্ষাবর্ম নেই। এত যে প্রণোদনার প্যাকেজ, অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য কিছু নেই। একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ৫০ লাখ মানুষের জন্য আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তার পুরো বাস্তবায়ন হয়নি। এই দরিদ্রদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ রাজধানী বা শহর থেকে বিতাড়িত হচ্ছে। আমরা একে বলছি ‘উল্টো অভিবাসন’ বা রিভার্স মাইগ্রেশন। এটা বাংলাদেশে একেবারে নতুন। শুধু আয় কমে যাওয়ায় এটা হয়নি। আয় তো গ্রামেও কমেছে। এখানে চারটি চলক কাজ করেছে—বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বা এ–জাতীয় আনুষঙ্গিক ক্ষেত্র, যানবাহন ব্যয় এবং চিকিৎসার খরচ। বাংলাদেশ সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে করোনাকালে বাসের ভাড়া বেড়েছে। ২০১৩ সালে সরকারি হিসাবে, ‘আউট অব পকেট এক্সপেন্স’ ছিল ৬৩ শতাংশ। বলা হয়েছিল, এটি কমবে। কিন্তু ২০২০ সালে উল্টো এটি বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে।
প্রশ্ন :
আপনি চারটি সংকটের কথা বলেছিলেন। বাকি দুটি সংকট কী?
হোসেন জিল্লুর: তৃতীয় সমস্যাটি নিয়ে দেশে–বিদেশে কোথাও আলোচনা নেই। সেটি হলো মানবসম্পদের সংকট। মানবসম্পদ উন্নয়নে নীতি-আলোচনার ঘাটতি রয়ে গেছে। এই মানের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষার্থী শিক্ষাকেন্দ্র থেকে বের হয়ে চাকরি পাচ্ছে না। এই সংকটের একটি উৎস শিক্ষার মান। এখন নিম্নমানের শিক্ষার মহাসমুদ্রে মানসম্মত শিক্ষার কিছু দ্বীপ বাংলাদেশে ভেসে আছে। এই করোনাকালে আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে। ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে শিক্ষার সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা হয়েছে। এতে কিছু লাভ হয়েছে। আবার সমাজে ‘ডিজিটাল বিভাজন’ও সৃষ্টি হয়েছে। সুবিধাপ্রাপ্ত কিছু মানুষ সুবিধাটি পাচ্ছে, কিন্তু অসংখ্য মানুষ এর বাইরে পড়ে থাকছে।
চতুর্থ সংকটটি সুশাসনের অভাব। এটা সাধারণভাবেই ছিল, কিন্তু করোনাকালে এর প্রকট চেহারা আমরা দেখলাম। দুর্নীতি এখন আনুষ্ঠানিক। স্বাস্থ্য খাতে এর চিত্রটি ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সুশাসনের এ সংকটের দুটি নতুন চেহারা দেখলাম। একটি হলো, যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁদের নিয়োগে বা বদলে যোগ্যতা কোনো বিচার্য বিষয় নয়। দ্বিতীয়টি হলো, দায়িত্বপ্রাপ্তদের কেউ যদি ভালো কাজ না–ও করেন, তার জন্য তাঁকে কোনো রাজনৈতিক মূল্য দিতে হচ্ছে না। এটি স্বাস্থ্য খাতসহ সব খাতেই। বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে বসানো বা নিয়োগের ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স কোনো কাজ করছে না। নিয়োগদাতাদের মর্জিই প্রধান।
বাংলাদেশের অগ্রগতিতে মানুষের সহনশীল উদ্যোগ সব সময় বড় ভূমিকা রেখেছে, বিশেষ করে সম্মিলিত উদ্যোগ। এবারও এ রকম প্রবণতা ছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ছিল কিছুটা বিপরীতমুখী। আগেও এসব ক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ ছিল। এবার এর মাত্রা ছিল বাড়তি। এর মধ্যে রাজনৈতিক শাসনের নতুন বাস্তবতা আমরা টের পেয়েছি। কোনো কোনো উদ্যোগ বন্ধ করে দেওয়া না হলেও গণ্ডি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তুমি উদ্যোগী হও, কিন্তু গণ্ডির ভেতরে থাকো। অর্থাৎ একটা বনসাই–বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। বিজন শীলের ঘটনা তার উদাহরণ।
প্রশ্ন :
বেসরকারি খাত বা উন্নয়ন সহযোগী এনজিওগুলো কি যথার্থ ভূমিকা নিতে পেরেছে? স্থানীয় সরকারের ভূমিকাই–বা কেমন ছিল?
হোসেন জিল্লুর: এপ্রিলের শুরুতে সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রে যখন নানা সমস্যা ছিল, তখন ব্যক্তি উদ্যোগটাই মুখ্য ছিল। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা ঠিক, এনজিওগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছে বটে, তবে জোরালো নয়। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হয়েছে। তবে সেখানে দুর্নীতির বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। আবার তাদের প্রতিবন্ধকতাও ছিল। করোনায় স্থানীয় উৎস থেকে আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেককে তারা বেতন দিতে পারছিল না। বহু প্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন দিতে পারছিল না। স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের সঙ্গে সুশাসনের একটি ভূমিকা আছে। এখানে নীতিগত ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন দরকার। দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাটা বড় ভুল হয়েছে। এতে স্থানীয়ভাবে দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার দলের ভেতরেও প্রতিযোগিতা সীমিত হয়ে গেছে। ওপর মহলের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ আছে, তারই মনোনয়ন পাচ্ছে। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এখন যে হাইব্রিড নেতা-কর্মীর কথা শোনা যাচ্ছে, তার পেছনে মাঠপর্যায়ের এই রাজনীতিহীনতার ভূমিকা আছে। স্থানীয় রাজনীতির পুনর্জীবনের স্বার্থেই স্থানীয় সরকারে দলভিত্তিক নির্বাচন বন্ধ হওয়া দরকার।
প্রশ্ন :
আপনি অনেকগুলো সংকটের কথা বললেন। এগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কী?
হোসেন জিল্লুর: সংকট তো বহুমাত্রিক। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে এসবের প্রভাব আছে। এগুলোর সমাধানের উপায়ও তাই ভিন্ন ভিন্ন। অর্থনৈতিক চিন্তার মধ্যে তিনটি বিষয় রাখতে হবে। এক. প্রবৃদ্ধির নতুন চলক নির্ধারণ করতে হবে। দুই. গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্জাগরণ লাগবে। তিন. অনানুষ্ঠানিক খাতে নতুন নীতির জন্য মনোযোগ লাগবে। আমরা মনে করছি, টিকে থাকাটাই মূল কথা, কিন্তু এটাই বড় কথা নয়। আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে বনসাই না করে তার ব্যাপ্তি ঘটাতে হবে। আমাদের নানা অনিশ্চয়তা আছে। এখানে দরকার নতুন জাতীয় মুড (মনোভাব)। আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ উদ্যমী মনোভাব। সেটিকে চাঙা করা দরকার।