আগস্টে সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক শেষ করতে চায় রাষ্ট্রপক্ষ

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক আগস্টে শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় সাক্ষীদের ওপর হুমকি-ধমকি আপাতত বন্ধ হলেও মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আদালত সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই মামলায় ৪৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা পর্ব শেষ হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আশা করছেন। অবশ্য সাক্ষীদের উপস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।

ফেনী আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ প্রথম আলোকে জানান, ঈদের আগে (৯ আগস্ট সম্ভাব্য ছুটি শুরু) সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। ঈদের পরে যুক্তিতর্ক শুরু হবে। আগস্টে যুক্তিতর্ক শেষ করার ইচ্ছা আছে। অথবা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হবে। এরপর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করবেন আদালত।

এ মামলার সাক্ষীর সংখ্যা ৯২। প্রথম ২০ জনই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে বিবেচিত। তাঁদের বেশির ভাগই মন খুলে সব কথা আদালতে বলতে পারেননি। কারণ, মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হলে আসামির স্বজনেরা সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ১০ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। এরপর জেলা পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই মাঠে নামে। হুমকিদাতা চার-পাঁচজনকে এলাকায় শনাক্ত করে পুলিশ।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আসামির স্বজনেরা সাক্ষীদের অনবরত হুমকি দিয়ে আসছিল। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ হুমকিদাতা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে মাঠে নামে। আসামিদের চার-পাঁচজন স্বজন চিহ্নিত হয়েছে। তবে পরবর্তী সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি আদালতে হাজির করার কাজের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

হুমকিদাতা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে মঈন উদ্দিন জানান, পুলিশ সতর্ক করে দেওয়ার পর হুমকিদাতা ব্যক্তিরা চুপ হয়ে গেছে। তারা সবাই নজরদারিতে আছে। তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হুমকিদাতা ব্যক্তিদের পরিচয় তিনি জানাতে চাননি।

>সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া চার-পাঁচজন শনাক্ত 
নজরদারিতে রাখার দাবি পুলিশের 
সাক্ষীদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ বাদী ও পিপির


গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজীর মাদ্রাসায় নুসরাত জাহানের ওপর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করেন। এতে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

ফেনী আদালতের পিপি হাফেজ আহাম্মদ মনে করেন, আসামির স্বজনদের হুমকি একেবারে বন্ধ হয়েছে তা বলা যাবে না। বিভিন্ন সাক্ষীকে এখনো চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে বেশির ভাগ সাক্ষী আদালতে স্বাভাবিক সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সাক্ষীদের ওপর সরাসরি হুমকি আগের চেয়ে কমেছে। তবে কোনো কোনো সাক্ষীকে আদালতে সবকিছু না বলার জন্য অনুরোধ করছে আসামির লোকজন। নাম প্রকাশ না করে দুজন সাক্ষী বলেন, সবাইকে একসঙ্গে গ্রামে বা এলাকায় বসবাস করতে হবে। নিজেদের মধ্যে তিক্ততা না বাড়াতে এবং আদালতে বেশি কথা না বলতে এক আসামির স্বজন তাঁদের অনুরোধ করেছেন।

এ মামলার চার আসামির কৌঁসুলি আহসান কবির বলেন, ‘এজলাসের বাইরে কী ঘটছে, তা জানার সুযোগ আমার নেই। এজলাসে আমার মক্কেলদের (আসামি) পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কাজটি করে যাচ্ছি। মক্কেলদের নির্দোষ প্রমাণ করার আমার দায়িত্ব।’

মামলার বাদী মাহমুদুল হাসানও বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দু-একজন সাক্ষী চাপের মধ্যে আছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তবে পুলিশ প্রশাসনও খুব তৎপর আছে।’ মামলার অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’