আগামী ভোট ইভিএমে, সবার অংশগ্রহণ নিয়ে আশাবাদ

ইভিএম
ফাইল ছবি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই অংশ নেবে বলে আশাবাদী তিনি।

শনিবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, র‌্যাব এবং এই বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের অধিকার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা নিয়েও হয়তো ভবিষ্যতে চাপ আসতে পারে। তবে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করছে। বৈঠকে দলের নেতাদের তিনি বলেছেন, এসব বিষয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়। ষড়যন্ত্র মোকাবিলার শক্তি ও সামর্থ্য সরকারের আছে।

আরও পড়ুন

বৈঠকে উপস্থিত থাকা সূত্র আরও বলে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ জন্য নেতা-কর্মীদের আরও বেশি করে জনগণের কাছে যেতে হবে, ভোট চাইতে হবে। ভোটে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত জানিয়ে তিনি বলেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করছে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। ফলে জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে, এ বিষয়ে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই।

আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শুরু হয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ওই বৈঠক চলে। শুরুতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছ থেকে সাংগঠনিক প্রতিবেদন নেওয়া হয় এবং এর ওপর আলোচনা হয়। এ ছাড়া সমসাময়িক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়েও কথা হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা জানান, আগামী নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। কোনো নেতা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে দলের মনোনয়ন পাবেন না। দলের মনোনয়ন পেতে প্রার্থীকে অবশ্যই জনপ্রিয় হতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সবাইকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জয়ী হতে হবে। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে অংশ নেবে। অতীতে যেভাবে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করা হয়েছে, সেভাবে আগামী নির্বাচনেও আসন ভাগাভাগি করা হবে বলে নেতাদের জানান তিনি।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নেতারা বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই তৃণমূল পর্যন্ত দলকে সংগঠিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো যেসব জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন হয়নি, তা দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন তিনি। এ ছাড়া বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিজ নিজ বিভাগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন যাতে সময়মতো শেষ হয়, সে বিষয়ে তদারকি করতে বলেছেন তিনি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় প্রধান আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিন-তারিখ নিয়ে কথা বলেননি। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্মেলন হবে, এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, তিন বছর মেয়াদি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে।

বৈঠক সূত্র জানায়, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন দলের বর্তমান সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে গতিতে তৃণমূলকে সংগঠিত করা দরকার ছিল, সেটা সম্ভব হয়নি। দলের বিভিন্ন স্তরে দ্বন্দ্ব-কোন্দল আছে। তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ার হতাশা আছে। এরপর একাধিক নেতা বৈঠকে একই আশঙ্কার কথা বলে তৃণমূলের দ্বন্দ্বের বিষয়ে কথা বলেন। কেউ কেউ দলের নেতা-কর্মীদের চাকরি দেওয়ারও দাবি করেন। এ বিষয়ে দলের সভাপতি বলেন, বড় দলে সব চাওয়া পূরণ না–ও হতে পারে। আর চাকরিবাকরি মেধার ভিত্তিতে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দলের নেতাদের এমন কিছু করা যাবে না যা নিয়ে মানুষের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

এদিকে গত রাতে বৈঠক শেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণভবনের বাইরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় তিনি বলেন, দলের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের কাজ চলছে।