আগে ছিল, এখন নেই

মো. আব্দুস শহীদ
মো. আব্দুস শহীদ

মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ একাংশ) আসনের সাংসদ মো. আব্দুস শহীদের ছিল ২৫ ভরি সোনা। আর স্ত্রীর নামে নগদ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র এবং শেয়ারের সঙ্গে উল্লেখ ছিল ১০০ ভরি সোনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় হলফনামায় এসব উল্লেখ ছিল। এবারের হলফনামায় সোনার পরিমাণ ফাঁকা রেখে সেখানে লেখা আছে শুধু ‘মূল্য অজানা’।
এই আসনে মো. আব্দুস শহীদ এবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাংসদ হয়ে জাতীয় সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে আব্দুস শহীদের দাখিল করা হলফনামা ঘেঁটে তাঁর স্ত্রী উম্মে কুলসুমার নামে অস্বাভাবিক সম্পদ থাকার তথ্য বের হয়। ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘তিনি নামের কাঙাল, স্ত্রী সম্পদের’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।
এবারের হলফনামায় আব্দুস শহীদ অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজ নামে নগদ অর্থ দেখিয়েছেন ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৫ টাকা। ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ ৫ লাখ ১৪ হাজার ৯২৫ টাকা। ব্যাংক, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ৮০ টাকা। সঞ্চয়পত্র ২ লাখ টাকার। বাস, ট্রাক এবং অন্য গাড়ির মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ৮০০ টাকা। নিজের সোনা আছে ৭৫ হাজার টাকার। আর স্ত্রীর সোনার পরিমাণ ফাঁকা রেখে লেখা রয়েছে ‘মূল্য অজানা’।
দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় আব্দুস শহীদ অস্থাবর সম্পত্তিতে নিজ নামে নগদ অর্থ দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা অর্থ ২৪ লাখ ৭৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৫৩ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার ছিল ১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। পোস্টাল সেভিংয়ে আমানত ছিল ২ লাখ টাকা। নিজের নামে সোনা ছিল ২৫ ভরি, যার মূল্য উল্লেখ ছিল ৭৫ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর সোনা ছিল ১০০ ভরি। তবে সোনার দাম উল্লেখ ছিল না।
ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল ৪০ হাজার টাকার। আসবাব ১৫ হাজার টাকার। অন্যান্য খাতে বৈদেশিক দান ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার। কৃষিজমি ৫ দশমিক ৭ একরে বার্ষিক আয় ছিল ১৬ হাজার টাকা। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া থেকে কোনো আয় দেখানো হয়নি। ব্যবসা থেকে আয় ছিল ৩৮ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪০ টাকা। সংসদ সদস্য ও প্রাইভেট কোম্পানি থেকে সম্মানী ভাতা পেতেন ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ টাকা।
এবারের হলফনামায় একই পরিমাণ জমি থেকে বার্ষিক আয় ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আয় ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৭ টাকা। সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করলেও ব্যবসার আয় ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত ৪৪ হাজার ৬৭৪ টাকা। স্ত্রীর ৯৪ হাজার ৭১৩ টাকা। চাকরি, সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা (করমুক্ত) ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৭ টাকা। গ্লোবাল লিংক লিমিটেড থেকে প্রাপ্ত ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ টাকা।
দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল, ঢাকার উত্তরায় পাঁচটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছিল ১৭ লাখ ৩ হাজার ৩৫০ টাকা। এবারের হলফনামায় ঢাকায় আটটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৫০ টাকা।
নবম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮ সাল) আব্দুস শহীদের হলফনামার তথ্য থেকে জানা যায়, হবিগঞ্জের জগদীশপুরে ‘গ্লোবাল লিংক লিমিটেড’ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। তাঁর ব্যবসা ও বিদেশ ভ্রমণকালীন আয় মোট ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ছিল।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫৫ টাকা ছিল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৫০ হাজার ৭০২ টাকা, ২ লাখ ৮৯ হাজার টাকার শেয়ার, ৫০ লাখ ২ হাজার ২০০ টাকা দামের দুটি মোটরগাড়ি, নিজের সোনা ছিল ২৫ তোলা (দাম ৭৫ হাজার টাকা)।
স্থাবর সম্পদ হিসেবে ৫০ হাজার টাকার ৭২ শতক কৃষিজমি, ২ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ টাকার ৭ দশমিক ৭৩৫ একর অকৃষিজমি, ১৭ লাখ ৩ হাজার ৩৫০ টাকার রাজউকের পাঁচ কাঠার প্লটের উল্লেখ ছিল।