আত্মবিশ্বাসী হওয়া জরুরি

মাবিয়া আক্তার

মাবিয়া আক্তার। বাংলাদেশি ভারোত্তোলক। ২০১৬ দক্ষিণ এশীয় গেমসে নারীদের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন। কমনওয়েলথ ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে নারী ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে তিনি একটি স্বর্ণ জেতেন তরুণ বিভাগে এবং দুটি রুপা জয় করেন জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ বিভাগে। স্বর্ণপদক জিততে তিনি মোট ১৭৬ কেজি ভার উত্তোলন করেন। প্রথম আলোকে জানালেন তাঁর সেই পথচলার গল্প।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে আপনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো কী কী?

মাবিয়া আক্তার: স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তনই ঘটেছে। মা-বাবা কিংবা পরিবারের বয়স্কদের কাছে যেটা শুনেছি, তাতে এই পরিবর্তনকে রাত আর দিনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আগে মেয়েরা ঘরের বাইরে যেতেই অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতো।
অধিকাংশ নারীর জীবন ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্কুলের গণ্ডি পেরোনই ছিল তাদের জন্য দুষ্কর। প্রাথমিক শিক্ষার পর লেখাপড়া করতে পারাটা ছিল স্বপ্নের মতো। বর্তমান সময়ে এ ধরনের পরিস্থিতি চিন্তাই করা যায় না। মেয়েরা এখন যেমন লেখাপড়া করছে, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখছে। খেলার মাঠে পুরুষের পাশাপাশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ অবস্থান এবং পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন:

নারীর কর্মক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন।

মাবিয়া আক্তার: আমার খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুর পরিবেশ ছিল খুবই বন্ধুর। আমাকে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। শুধু তা-ই না, আমাকে প্রতিটা ধাপে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এত বাধা না পেরোতে হলে হয়তো আমি আরও আগে অনেক উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারতাম। আবার কখনো মনে হয়, এত বাধা পেরোতে না হলে হয়তো আমি সফল হতে পারতাম না।

প্রশ্ন:

আপনার ক্যারিয়ারের সন্ধিক্ষণ কোনটি ছিল?

মাবিয়া আক্তার: আমি সব সময় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আমার আত্মবিশ্বাসও বেশি ছিল। আমি নিজেকেই বলতাম, আমাকে সফল হতে হবে। এর পেছনে পরিবারের বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। কারণ, পরিবার পাশে না থাকলে সফল হওয়া অত্যন্ত কঠিন। আর আমার মনে হয়, আমার পরিবার পাশে না থকালে এই পথ পাড়ি দেওয়া হতো না। আমার ক্যারিয়ারের সন্ধিক্ষণ হচ্ছে ২০১৫-১৬। ২০১৫ তে এসে আমার মনে হতে লাগল আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আর ২০১৬ সালে যখন আমি সাউথ এশিয়ান গেমসের মেডেল পাই, তখন আমি নিশ্চিত হই আমাকে আর ফিরে তাকাতে হবে না। ব্যক্তিগত বা সামাজিক কোনো বাধাই আর আমাকে আটকে রাখতে পারবে না।

প্রশ্ন:

এ সময় তরুণের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

মাবিয়া আক্তার: তরুণদের কাছে প্রত্যাশার জায়গা অনেক। তাদের মনে রাখতে হবে, অন্যকে ভালো রাখার পাশাপাশি নিজেকেও ভালো রাখতে হবে এবং ভালোবাসতে হবে। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে নিজের এবং অন্যের অসম্মান হয়। হতাশ হওয়া যাবে না। বর্তমানের তরুণেরা অল্পতে হতাশ হয়ে পড়ে এবং আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটায়। আমার কাছে মনে হয়, এর থেকে প্রতিকারের পথ হচ্ছে নিজেকে জানা এবং ভালোবাসা। তরুণদের নিজেদের জানতে হবে এবং নিজের লক্ষ্য স্থির করতে হবে।