আনন্দ মোহন কলেজে তারুণ্যে ফিরে যাওয়ার দিন

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের র‌্যালি। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের র‌্যালি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রায়হানা তাসনিম। প্রায় ৩০ বছর পর এসেছেন শিক্ষাজীবনের স্মৃতিময় ক্যাম্পাস ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগে। যাদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন সম্মান (অনার্স) জীবনের পুরো সময়, সেই সহপাঠী-বন্ধুদের দীর্ঘ সময় পর কাছে পেলেন। জড়িয়ে ধরলেন একে অন্যকে। শুরু করলেন স্মৃতি রোমন্থন।

এ সময় অনুভূতির কথা ব্যক্ত করে ১৯৮৫-৮৬ সেশনের এ প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে যখন হাত মেলালাম বা জড়িয়ে ধরলাম, মনে হচ্ছিল যেন মনের সঙ্গে মন মেলালাম।’

শুধু রায়হানা তাসনিমই নন, এমন মধুর অনুভূতি কলেজটির প্রাক্তন গণিতজ্ঞদের। কয়েক যুগ পর প্রিয় বন্ধুবান্ধবকে কাছে পেয়ে বয়স ভুলে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন তারুণ্যদীপ্ত সোনালি অতীতে।

গেল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনীতে হাজির হয়েছিলেন ১৯৭১-৭২ থেকে ২০১৪-১৫ সেশন পর্যন্ত প্রায় হাজারখানেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এদিন পুরোনো ক্যাম্পাসে, পুরোনো বন্ধুদের পাশে পেয়ে সবাই মেতে উঠেছিলেন হারানো দিনগুলো ছুঁয়ে দেখার উচ্ছ্বাসে। স্মৃতির ঝাঁপি আর আনন্দ-আড্ডা-খুনসুটি যেন একমুহূর্তেই ফিরিয়ে আনল বিগত সময়কে।

গণিত বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধু জিয়াউল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, মুনজুরুল হক ও আবদুল কাদিরের সঙ্গে আড্ডায় মেতেছিলেন ১৯৮২-৮৩ সেশনের প্রাক্তন ছাত্র ও বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডি বয়েজ কলেজের শিক্ষক লুৎফুল রহমান। অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকের মিলনমেলায় যে আবেগ-উচ্ছ্বাস, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই কলেজের ইট-পাথর সবগুলোর সঙ্গেই আমরা পরিচিত। এখানে এসে আমাদের সময়কার স্যার ও সিনিয়র-জুনিয়রদের কাছে পেয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। এমন আয়োজন হলেই নবীন-প্রবীণদের মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে।’

ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনীতে হাজির হয়েছিলেন ১৯৭১-৭২ থেকে ২০১৪-১৫ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনীতে হাজির হয়েছিলেন ১৯৭১-৭২ থেকে ২০১৪-১৫ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

পুনর্মিলনী উপলক্ষে এদিন সকাল নয়টায় নগরের টাউন হল প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করা হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার। বর্ণাঢ্য বলতে যা বোঝায়, বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে একাকার নবীন-প্রবীণেরা। শোভাযাত্রাটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে ফুল দিয়ে সবাইকে স্বাগত জানান গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল কাশেম আকন্দ।

এরপর সবাই বেশ কিছু সময় সবান্ধব ঘুরে বেড়ান প্রিয় ক্যাম্পাস ও গণিত ভবনে। এ সময় কেউ হাতড়ে নিলেন ছাত্রজীবনের স্মৃতি। কারও আবার চোখের কোণে জমল পানি। ক্যাম্পাসে সুমধুর আড্ডা শেষে সবাই যোগ দেন টাউন হলে অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভায়।

সভায় বক্তব্য দেন কলেজ অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক, গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল কাশেম আকন্দ, সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম এ কুদ্দুস, আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক ভিপি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পুনর্মিলনী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল হাই ও সেক্রেটারি কাজী আজাদ জাহান প্রমুখ।

পুনর্মিলনীতে ব্যাচভিত্তিক ফ্রেমবন্দী, স্মৃতিচারণা পর্ব, আলোচনা, র‌্যাফল ড্র, নাটিকা, গানে অংশ নেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
পুনর্মিলনীতে ব্যাচভিত্তিক ফ্রেমবন্দী, স্মৃতিচারণা পর্ব, আলোচনা, র‌্যাফল ড্র, নাটিকা, গানে অংশ নেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

আলোচনা সভা শেষে দুপুরের খাবারের পর শুরু হয় ব্যাচভিত্তিক ফ্রেমবন্দী ও স্মৃতিচারণা পর্ব। এ সময় মজার মজার ঘটনার ঘনঘটা ঢেউ খেলে যায় অগ্রজ-অনুজদের হৃদয়ে। আবার স্মরণ করা হয় এ ভুবন ছেড়ে চলে যাওয়া সহপাঠীদেরও।

শেষ পর্বে র‌্যাফল ড্র, নাটিকা, নৃত্য, আবৃত্তি, গানে অংশ নেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে অনেকে শেষ সময়ের জন্য খুঁজে নিচ্ছিলেন একে অন্যকে, বেঁধে রাখছিলেন স্মৃতির ফ্রেমে। আবার কেউ কেউ প্রিয় বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন কফির চুমুকে।

*লেখক: আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী