আন্দোলন চলবে, কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়েরের ঘোষণা

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ছবি : সাজিদ হোসেন
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ছবি : সাজিদ হোসেন

মন্ত্রিসভায় কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হওয়ার পর গতকাল বুধবার রাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আজ দ্বিতীয় দিনের মতো এই বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এই বিক্ষোভের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার নবম থেকে ১৩ তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এদিকে আজ সকাল থেকেই দ্বিতীয় দিনের মতো ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’, ‘মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করছে। সকালে ৫০ থেকে ৬০ জন এ বিক্ষোভে অংশ নেয়। তবে বেলা গড়াতে থাকলে দুপুরের দিকে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমে যায়। বিকেলের দিকে সংখ্যা আবার বেড়ে যায়। বিক্ষোভ এখনো চলছে।

কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ আতিকুর বাবু বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। এ বিষয়ে আমরা আইনি লড়াইয়ে যাব।’ প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা আদালতে রিট দায়ের করবেন। এর আগে সকালের দিকে আতিকুর বাবু বলেন, আগামী শনিবার (৬ অক্টোবর) বিকেল তিনটায় শাহবাগে মহাসমাবেশ করবেন তাঁরা। দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না। 

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাথী রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কারও বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। নিজেদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত সরব না।’

শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে প্রায় সারা দিন যানজট দেখা যায়। বিকেলের দিকে এই যানজট আরও বেড়ে যায়। শাহবাগ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিকের সহকারী কমিশনার জানান, এই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শাহবাগ হয়ে যেসব গাড়ি চলে, সেগুলোকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে ডাইভারশন করা হচ্ছে। এলিফ্যান্ট রোড হয়ে মৎস্য ভবন অভিমুখী গাড়িগুলোকেও বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শাহবাগ থানার সামনে সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও দুপুরের পর পুলিশ সরে যায়। বেলা একটার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা এসে বিক্ষোভকারীদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। তবে বিক্ষোভকারীরা দাবি না মানা পর্যন্ত সরে যাবেন না বলে জানান।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি করা পেজ ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, মন্ত্রী পরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা সংস্কার কমিটির প্রতিবেদন বাতিল ঘোষণা, সব চাকরির পরীক্ষায় ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সুরক্ষা আইন, রাজাকারের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়া ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।