আবার কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু

ফাইল ছবি

অনলাইনে ট্রেনের সব টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত বদলে স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আজ শনিবার থেকে কাউন্টারে টিকিট বিক্রির এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। এখন থেকে ট্রেনের মোট আসনসংখ্যার ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রীরা স্টেশনের কাউন্টার থেকে কিনতে পারবেন। ২৫ শতাংশ অনলাইনে। আর করোনা পরিস্থিতির কারণে ৫০ ভাগ আসন ফাঁকা থাকবে।

ফের কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের অনেকে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে যারা নিম্ন আয়ের লোকজন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন না তারা এখন সহজেই কাউন্টারে গিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। বিপরীতে অনেকেই মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতিতে স্টেশনে এসে কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে টিকিট বিক্রি করাটাই নিরাপদ।

আজ দুপুরে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কিনতে আসা যাত্রীরা কাউন্টারের সামনে ভিড় করছেন। কোনো কোনো কাউন্টারে কিছুটা লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো লোকজন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। অনেকে মুখে মাস্ক নেই। টিকিটের জন্য কাউন্টারের মুখে ঠেলাঠেলিও করছিলেন অনেকে। টিকিট ছাড়া কোনো যাত্রীকে প্ল্যাটফর্মের ভেতর যেতে দিচ্ছেন না রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফটকের সামনে জীবাণুনাশক স্প্রে থাকলেও সেটা কাউকে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

বিমানবন্দর স্টেশনের কাউন্টার থেকে খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকিট কেনেন মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ আমি কাউন্টার থেকেই টিকিট কিনে অভ্যস্ত।

অনলাইনে কীভাবে কিনতে হয় আমি জানি না।’ কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়া সুবিধা হয়েছে বলে তিনি জানান।

রাজশাহী যেতে বিমানবন্দর স্টেশনের কাউন্টার থেকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কেনেন জামাল উদ্দিন। তিনি জানান, শুনেছি অনলাইনে আরামে টিকিট কেনা যায়। কিন্তু অনলাইন থেকে টিকিট কেনার নিয়মতো সবাই বুঝে না। তাই দুই ভাবে টিকিট কেনার সুযোগ থাকলেই ভালো।

করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারি নির্দেশনায় অর্ধেক আসন খালি রেখে ট্রেন চালু ও পুরো টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি ট্রেনের মোট আসনসংখ্যার ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তবে এই ৫০ শতাংশ টিকিটের অর্ধেক অর্থাৎ মোট আসনসংখ্যার ২৫ শতাংশ আসন কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। তবে টিকিট ইস্যু করার অন্যান্য নিয়ম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আন্তনগর ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট বিক্রি হবে না, দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী নেওয়া যাবে না বলেও জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম রুটের চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট অনলাইনে কেটেছেন মোসাব্বের হোসেন। তিনি বলেন, কাউন্টারে টিকিট বিক্রির সময় স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চললে অনলাইনে টিকিট কেটেও যাত্রীরা নিরাপদ থাকবেন না বলে তিনি জানান।

বিমানবন্দর রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসান জানান, যখন কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল তখন প্রতিদিন অনেকেই কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে এসে ফিরে যেতেন। অনেকেই জানতেন না অনলাইনে কীভাবে টিকিট কেনা যায়। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হতো। এখন সেটা আর থাকবে না। তিনি বলেন, যারা মনে করেন অনলাইনে টিকিট কাটবেন তারা অনলাইনে আর যারা স্টেশনে এসে টিকিট কিনতে চান তারা কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে সবার সুবিধা।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দিক থেকে আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্য বিধির নিয়ম মেনে চলতে। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনো অসচেতন। তাই অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য বিধি যথাযথ মানা হচ্ছে না।

বর্তমানে বিভিন্ন গন্তব্যে সব মিলিয়ে মোট ৬৭ জোড়া, অর্থাৎ ১৩৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সব কটি গন্তব্যের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়ে গেছে। যে সব ট্রেনের টিকিট অবিক্রীত রয়ে গেছে সেটা কাউন্টারে পাওয়া যাবে। মূলত ২১ তারিখের পরের ২৫ শতাংশ টিকিট যাত্রীরা কাউন্টার থেকে কিনতে পারছেন।