আবারও ওএসডি হচ্ছেন স্বাস্থ্যের সেই আমিনুল

আমিনুল ইসলাম
ফাইল ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই আমিনুল হাসানকে আবারও বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হচ্ছে। প্রথম দফায় যখন তিনি যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ছিলেন তখন রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির ঘটনায় তাঁকে (ওএসডি) করা হয়েছিল। এটা জুলাই মাসের ২১ তারিখের ঘটনা। এ ঘটনার ২৬ দিন পর ১৬ আগস্ট আমিনুলকে ঢাকা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়। সেই পদায়নের পর আবারও তাঁকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ছয় বছর ধরে নবায়ন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা চুক্তিকে অবৈধ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মো. আমিনুল হাসানসহ উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক মো. শফিউর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মো. দিদারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক মামলা করার পর এই কর্মকর্তাকে আবারও ওএসডি করার কথা বলা হচ্ছে।  
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, আমিনুল হাসানকে ওএসডি করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত নথি ঊর্ধ্বতনদের কাছে পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। পর্যায়ক্রমে অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্ম প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, করোনা চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে দেওয়া হলো। এর দায় কার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই ব্যাখ্যায় ক্ষুব্ধ হয় মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে সে সময় বলেছিলেন, তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল হাসান মহাপরিচালককে এই নথি (ফাইল নোট) দিয়েছেন। তিনি এই হাসপাতালের চুক্তির বিষয়টি দেখভাল করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমিনুল সে সময় জানান, সাবেক স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তবে সাবেক স্বাস্থ্যসচিব আসাদুল ইসলাম দাবি করেন, এসব কথা ভিত্তিহীন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ সব সময় ছিল। করোনা মহামারির সময় এসব অভিযোগ আরও বড় আকারে দেখা দেয়। স্পষ্ট হয়ে ওঠে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অদক্ষতা, ব্যর্থতা। জেকেজি ও রিজেন্ট কেলেঙ্কারির পর মানুষ হতবাক হয়। অনেক মানুষ মনে করে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জড়িত না থাকলে এই মাত্রার দুর্নীতি করা সম্ভব না। এর আগে গত ২২ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা, তদারক ও গবেষণা শাখার পরিচালক মো. ইকবাল কবিরকেও তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শুধু অধিদপ্তরই নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ভূমিকাও বেশ কিছু দিন যাবৎ প্রশ্নবিদ্ধ। এর আগে গত মাসের গোড়ার দিকে করোনা মহামারি মোকাবিলায় আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে তখনকার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে বদলি করে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিব হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন মো. আব্দুল মান্নান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, দুদক বা সরকারের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদক যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তারা সবার বিরুদ্ধেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিজেন্ট কেলেঙ্কারির পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার কর্মকাণ্ড নিয়েও নানা সমালোচনা চলছে। এর আগে বিতর্কের মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগ করেন।