আম আসে বিদেশ থেকেও, নাম জাম্বু, আরটুইটু

প্রতীকী ছবি

আমটি দেখতে একটু লম্বাটে গোছের। অবশ্য গোলগাল আকারেরও হয়। আমটি অনেকটা আঁশবিহীন। খেতে বেশ মিষ্টি। একেকটির ওজন হয় ৪০০ গ্রাম থেকে আধা কেজির বেশি। কখনো কখনো একেকটির ওজন এক কেজির কাছাকাছিও হয়। প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

আমের এই জাতের নাম জাম্বু। এসেছে থাইল্যান্ড থেকে। জাম্বু আমের কথা গত মঙ্গলবার সকালে বলছিলেন গুলশান-২ কাঁচাবাজারের ফল বিক্রেতা মো. সোলায়মান। আমের মৌসুমে বাজারে দেশি আম যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি কিছু কিছু পাওয়া যায় বিদেশ থেকে আমদানি করা আমও। দাম চড়া হওয়ার পরও বছরব্যাপী বিদেশি আমের চাহিদা থাকে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে মূলত থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইন থেকে বিভিন্ন জাতের আম আসে। আমদানি করা আম পাওয়া যায় গুলশান-১ ও ২ কাঁচাবাজার, বনানী কাঁচাবাজার, নিউমার্কেট, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকার ফলের দোকানে। এ ছাড়া সুপারশপগুলোতেও বিদেশি আম বিক্রি হয়। বিদেশি আমের ক্রেতা উচ্চ আয়ের মানুষ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৮৫ লাখ টাকার আম আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে তা অনেক বেশি ছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মূল্যের আম আমদানি করে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকার আম আমদানি হয়েছিল।

গুলশান-২ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি আমের মৌসুম এলে তাঁরা বিদেশি আম দোকানে কম রাখেন। মৌসুম শেষে আবার বিদেশি আম দোকানে ওঠানো হয়।
গুলশান-২ কাঁচাবাজারে ২০ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন রুহুল আমিন। তিনি বলেন, সাধারণ সময়ে দৈনিক আট থেকে দশ কেজি বিদেশি আম বিক্রি হয়।

ঢাকার ফল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা আমগুলো হলো গ্রিন ম্যাঙ্গো, সুইট ম্যাঙ্গো, হানি ম্যাঙ্গো, জাম্বু, বানানা ম্যাঙ্গো ও ইয়েলো ম্যাঙ্গো নামে পরিচিত। চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে এসব আমের দাম কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা আরটুইটু, হানি গোল্ড ও কেনসিংটন প্রাইড জাতের আমও বাজারে পাওয়া যায়। এসব আম কেজিপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

গুলশানের চেইনশপ ইউনিমার্টের বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানান, সারা বছর তাঁদের সুপারশপে বিদেশি আম কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি মাসে তাঁরা ৪০ থেকে ৫০ কেজি বিদেশি আম বিক্রি করে থাকেন। ইউনিমার্টের সুপারভাইজার নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখানে থাইল্যান্ডের গ্রিন আম ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার আরটুইটু আমও বেশি কেনেন ক্রেতারা। আরটুইটু আমটি সবুজরঙা হয়। একেবারে পেকে গেলে টকটকে হলুদ রং ধারণ করে। এগুলোর একেকটির ওজন এক কেজির কাছাকাছি। এর দাম এক হাজার টাকার বেশি।

ফল আমদানিকারকেরা বলছেন, দেশে আমের উৎপাদন বাড়ছে। তবে বারোমাসি আম পাওয়া যায় না। এ কারণে বছরজুড়েই সামান্য পরিমাণে আম আমদানি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আম আমদানিতে করভার ৮৯ শতাংশের কিছু বেশি।

ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, থাইল্যান্ড থেকে দেশে প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই টন আম আসে। আর শীতকালে অস্ট্রেলিয়া থেকেও খুবই সামান্য পরিমাণে আম আসে। উড়োজাহাজে আমদানি হয় বলে এসব আমের দাম বেশি পড়ে।