আমরা কি রোকেয়ার উত্তরসূরি, প্রশ্ন রাশেদা কে চৌধূরীর

রাশেদা কে চৌধূরী

মন্ত্রিত্বে, সংসদ সদস্য পদে, প্রশাসনে, শিক্ষায়, উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি একই উপজেলায় হাজারো কিশোরীর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নারীজাগরণের পথিকৃৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের মনে করতে পারি কি না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। রোকেয়া দিবস ২০২১ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমিতে একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে তিনি এমন প্রশ্ন তোলেন।

রোকেয়ার উত্তরসূরি হওয়ার ঘাটতির দিক তুলে ধরে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, গত সপ্তাহের খবর বেরিয়েছে, উত্তরবঙ্গের একটি উপজেলায় হাজারের বেশি মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। সারা দেশের প্রাথমিক ফুটবল টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিক করা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়েটিরও বিয়ে হয়ে গেছে। হ্যাটট্রিক করে ২০১৭ সালে সেই মেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক নিয়েছিল। বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকারের কিছুই করার নেই? এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা চান তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন, মাধ্যমিককে কেন করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, উপবৃত্তির কারণে মেয়েরা বিদ্যালয়ে আসত। কিন্তু বিয়ে হয়ে গেলে উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিয়ের পর কিশোরীরা আর পড়াশোনায় ফিরছে না। বিয়ের পরও মেয়েদের পড়াশোনায় ফেরাতে শর্ত সাপেক্ষে উপবৃত্তি চালিয়ে যাওয়ার দাবিও জানান তিনি।

রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘ভারতের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী কৈলাস সত্যার্থীর সঙ্গে ২৫ বছর ধরে শিক্ষা ও শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করছি। একবার তাঁকে নিয়ে বিহারে গিয়েছিলাম। বিহারে মাঠের কৃষককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে চান? এক কথায় তাঁর উত্তর, “কিয়া ফায়দা?” কিন্তু আমাদের দেশের কোনো মানুষ এ ধরনের কথা বলবে না। রিকশাওয়ালা, কৃষিশ্রমিক—সবার মধ্যে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর চাহিদা তৈরি হয়েছে। এই পরিবর্তনের পেছনে নারীশিক্ষার ভূমিকাই প্রধান।’

দেশে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা নারীশিক্ষাবান্ধব। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু নারীশিক্ষা নীতিমালার পরিবর্তন হয়নি বলে উল্লেখ করেন এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পাঁচ লাখের ওপরে। তার মধ্যে তিন লাখের বেশি নারী। আন্তর্জাতিক গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, যে মা অন্তত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন, সেই মায়ের সন্তান কখনো নিরক্ষর হয় না। এমনকি তাঁর সন্তানেরা অপুষ্টিতেও ভোগে না।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, নারীদের পর্যাপ্ত শিক্ষার পাশাপাশি সুশিক্ষিতও করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান বলেন, নারীদের পেছনে রেখে সভ্য সমাজ এগিয়ে যেতে পারবে না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নারীদেরও সঙ্গে নিতে হবে।