আমার প্রথম প্রহরের সঙ্গী

আমাদের আহ্বানে লেখা পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। কোভিড–১৯ অতিমারির শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার দিনে প্রথম আলোয় প্রকাশিত কোনো খবর থেকে স্বস্তি, আনন্দ, সাহস বা প্রেরণা পেয়ে থাকলে লিখে জানাচ্ছেন সে কথা। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]

বাংলাদেশের একটি অংশে বাস করে পুরো দেশ ও পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো পত্রিকার মাধ্যমে একমুহূর্তে আমরা জানতে পারছি। এই আগ্রহ নিয়েই পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমার পত্রিকা পড়ার শুরু। তখন থেকেই সকালের প্রথম প্রহরে প্রথম আলো আমার সঙ্গী।

এরপর ২০১৯ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হলাম। শিক্ষার্থী হয়ে গিয়ে উঠতে হলো মেডিকেলের হোস্টেলে। কিন্তু হোস্টেলে তো প্রথম আলো পত্রিকা সরবরাহ করা হয় না। বাধ্য হয়ে পড়তে হতো অন্য পত্রিকা। কিন্তু প্রথম আলো বাদ দিয়ে অন্য পত্রিকা পড়ে কি আর মন ভরে? তাই লাগালাম খোঁজ। আবিষ্কার করলাম, দুপুরের দিকে একজন হকার মামা হাসপাতালের সামনে পত্রিকা বিক্রি করেন। মুশকিল আসান হলো। এরপর থেকে প্রতিদিন ক্লাস শেষে দৌড়ে গিয়েই হকার মামার কাছ থেকে পত্রিকা নিয়ে আসতাম।

সকালের মধ্যেই প্রথম আলোর সব কপি বিক্রি হয়ে যেত। তবু হকার মামা সেগুলোর মধ্য থেকে আমার জন্য একটা কপি তুলে রাখতেন। আমার এই খ্যাপামি দেখে বন্ধুরা সবাই মজা করে বলত, আমি নাকি বিসিএস পরীক্ষার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সত্যিই তো তা নয়। আসলে পত্রিকা না পড়লে আমার কাছে মনে হতে থাকত, পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। পুরো বিশ্বে নানা ঘটনাধারা বয়ে চলেছে, আমি তার কিছুই জানছি না। আর পত্রিকা বলতে তো আমার কাছে প্রথম আলোই। এটি পড়লে আলাদা এক তৃপ্তি কাজ করে।

যাহোক, এ বছরের শুরুর দিকেই কোভিড-১৯–এর কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলো। আমিও চলে এলাম ঢাকায় আমাদের বাসায়। লকডাউনে আমার পুরো সকালটাই কাটত পত্রিকা পড়ে। লকডাউনের শুরুতে সংক্রমণের ভয়ে আম্মু বাসায় পত্রিকা রাখতে রাজি ছিলেন না। পরে আম্মুকে বোঝালাম যে এমনিতেই আমরা বাসায় বন্দী। এর মধ্যে যদি পত্রিকা নেওয়া বন্ধ করে দিই, তাহলে এই মহামারি সম্পর্কেও তো দরকারি আর সঠিক তথ্য আমরা জানতে পারব না। অনেক কষ্টেসৃষ্টে আম্মুকে রাজি করানো হলো। এমনকি আম্মুকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য হকার মামা পত্রিকা দেওয়ার পর সেটাকে স্যানিটাইজ করার জন্য স্প্রে করতাম। পত্রিকাটি শুকিয়ে তারপর পড়তাম। এরপর জানতে পারলাম, কাগজ থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই। তারপর এই কাণ্ড থেকে আমার নিস্তার ঘটল।

এই ভাইরাস তো আসলেই বিজ্ঞানী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাধারণ জনতা—সবার কাছেই নতুন। নিত্যনতুন গবেষণা চলছে, নানা দেশে নানা অভিজ্ঞতা জমা হচ্ছে, কিন্তু পত্রিকা ছাড়া নতুন তথ্য জানব কোথায়। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য এবং এর প্রতিরোধব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পত্রিকাই ভরসা। আর বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের জন্য চাই নির্ভরযোগ্য পত্রিকা। সেখানেই প্রথম আলো

প্রথম আলোর ‘ভালো থাকুন’ কলামটি আমার সব সময়ই খুবই ভালো লাগত। এই সময়ে সেটা হয়ে উঠল বিশেষ পছন্দের। এ ছাড়া অতিমারির হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরতে পত্রিকাটিতে যে গ্রাফ আকারে উপস্থাপন করা হতো, সেটা আমাদের কাছে পরিস্থিতি আরও সহজবোধ্য করে তুলে ধরেছে।

আমার কাছে প্রতি বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর মূল আকর্ষণ ‘প্র স্বাস্থ্য’। কোন ভ্যাকসিন আগে বাজারে আসতে পারে এবং সেটি আমাদের দেশের জন্য কতটা সহজপ্রাপ্য হতে পারে, পত্রিকা পড়ে আমার আর আব্বুর—দুজনের মধ্যেই সে আলোচনা চলছে তো চলছেই। আর হ্যাঁ, লকডাউনে কোন ছবি দেখব, ‘বিনোদন’ বিভাগে চলচ্চিত্রের পরামর্শ থেকে ছবি দেখে আমাদের অলস দুপুর পার হয়ে যেত।

২২টি বছর প্রথম আলো সফলতার সঙ্গে এগিয়েছে। সামনের দিনগুলোতেও সত্য, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রথম আলো এগিয়ে যাক। শুভকামনা থাকল প্রথম আলোর প্রতি।