আরও তিন বছর বাড়ছে দায়মুক্তির মেয়াদ

‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০-এর মেয়াদ আবার বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশেষ বিধানের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এই বিশেষ বিধানটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দায়মুক্তির বিধান হিসেবে পরিচিত।

আইনটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে অর্থ, বাণিজ্য, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়েছে। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করলে তা পাঠানো হবে জাতীয় সংসদে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, আইনটির বর্তমান মেয়াদ আগামী অক্টোবরে শেষ হবে। এরপর আরও তিন বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তাঁরা।

প্রচলিত দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রকল্প খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার—মূলত এই যুক্তিতে ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য বিশেষ আইনটি সংসদে পাস করা হয়। এর ফলে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের পরিবর্তে পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এই আইনের আওতায় আলোচিত-সমালোচিত ভাড়াভিত্তিক দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সরকার দাবি করে, এই আইনের কারণেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন গতিশীল করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৯ সালের সংকট ও দৈন্যদশা থেকে বিদ্যুৎ খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

২০১০ সালে পাস হওয়া আইনটির মেয়াদ ২০১২ সালে শেষ হওয়ার পর আরও দুই বছর, অর্থাৎ ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় দফায় চার বছর মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। আগামী ১১ অক্টোবর সেই মেয়াদও শেষ হচ্ছে।

এই আইনের বিশেষ বিধান হলো ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ বা আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাবে। এই আইনের অধীন কৃত, বা কৃত বলে বিবেচিত কোন কাজ, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।’

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশেষ বিধানের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব সম্পর্কে আয়োজিত সভাগুলোতে কোনো কোনো অংশগ্রহণকারী আইনটি স্থায়ী করার পক্ষে মত দেন। তবে দায়মুক্তির বিধান থাকায় আইনটি স্থায়ী করা সংবিধানসম্মত হবে না বলে মত উঠে আসে। যে কারণে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়নি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের মেয়াদ আবারও বৃদ্ধি করার বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ আইন যখন করা হয়েছিল, তখনই আমরা বলেছিলাম, সামনে এমন সব প্রকল্প নেওয়া হবে, সেখানে দুর্নীতি হবে। আর তা আড়াল করতেই এ আইন। আমাদের আশঙ্কা সত্যি হয়েছে, অধিকাংশ প্রকল্পের সঙ্গে দুর্নীতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সামনে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও অনেক প্রকল্প নেওয়া হবে, সেসবকে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এ আইনের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।’