আরাফাত ওড়ালেন বাংলাদেশের পতাকা

আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের পতাকা হাতে ট্রায়াথলেট মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত
ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্নটা অনেক দিনের। বিশ্বে আয়রনম্যানের সর্বোচ্চ আসরে ওড়াবেন দেশের লাল-সবুজ পতাকা। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার বিকেলে, যুক্তরাষ্ট্রে। এদিন দেশটির উটাহ অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড়ের সমন্বয়ে কঠিনতম ট্রায়াথলনআয়রনম্যান প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ আসর আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন ৩২ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি ট্রায়াথলেট। মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত হলেন আয়রনম্যানের সর্বোচ্চ আসর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করা প্রথম বাংলাদেশি।

১১ ঘণ্টা ৩২ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ৬টা ৩৫ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে (বাংলাদেশ সময় আজ রোববার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিট ২৫ সেকেন্ড) আয়রনম্যান চ্যালেঞ্জ জয় করেছেন আরাফাত। এ চ্যালেঞ্জে ছিল ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার, পাহাড়ি রাস্তায় ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং ও ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার দৌড়।

এবারের আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন ৩ হাজার ৮০০ প্রতিযোগী। সফল হয়েছেন ২ হাজার ৬৮৫ জন। তাঁদের মধ্যে সময়ের দিক থেকে আরাফাতের অবস্থান ৪৯০তম। ২ হাজার ১১৭ জন পুরুষ প্রতিযোগীদের মধ্যে ৪২৮তম এবং ৩০ থেকে ৩৪ বছরের বয়সভিত্তিক গ্রুপে ১৯৪ জনের মধ্যে আরাফাতের অবস্থান ৬১তম।

আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের বাংলাদেশের ট্রায়াথলেট মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং সম্পন্ন করতে সময় নেন ৫ ঘণ্টা ৫১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড।

আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাতের ফলাফল
আয়রনম্যান ট্র্যাকার ওয়েবসাইটের তথ্য

এর আগে গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে সাঁতার শুরু করে সকাল ৮টা ১২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডে নির্ধারিত ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার শেষ করেন তিনি। ১ ঘণ্টা ৯ মিনিটে শেষ করা সাঁতারে আরাফাতের প্রতি ১০০ মিটারে সময় লেগেছিল ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। সাঁতার ও সাইক্লিংয়ের নির্ধারিত দূরত্ব অতিক্রম করতে আরাফাত সময় নিয়েছেন ৭ ঘণ্টা ৮ মিনিট ১২ সেকেন্ড। বাকি সময়টা লেগেছে ৪২.২ কিলোমিটার দৌড় সম্পন্ন করতে। প্রতি মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে তিনি সময় নিয়েছেন ৯ মিনিট ৫১ সেকেন্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক আরাফাত গত ১৫ এপ্রিল সেন্ট জর্জে পৌঁছে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কঠোর অনুশীলন শুরু করেন। প্রতিযোগিতার আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘শুক্রবার ছিল বিশ্রাম। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যালেঞ্জ অর্জন করার সব প্রস্তুতি রয়েছে। এবারের রুট অন্যান্যবারের চেয়ে কঠিন করা হয়েছে বলে আয়োজকেরা বলেছেন। আশা করছি, আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের ফিনিশিং পয়েন্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে পারব।’ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে একজন প্রতিযোগীকে ১৭ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার, ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং এবং ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার দৌড় শেষ করতে হয়। তবেই তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আয়রম্যান খেতাব অর্জন করেন।

আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাতের সাইক্লিং
ছবি: সংগৃহীত

একাধিক আয়রনম্যান খেতাব অর্জন করার পর ক্রীড়াবিদের (ট্রায়াথলেট) আরও কিছু যোগ্যতা দেখে তবেই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নির্বাচন করা হয়। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিযোগী হিসেবে নির্বাচিত হতে আরাফাতের সময় লেগেছে তিন বছর। আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে আরাফাতের প্রতিযোগী নম্বর ছিল ১১৩০।

আরও পড়ুন

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সেন্ট জর্জ শহরেই আয়রনম্যান ৭০ দশমিক ৩ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ (ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের অর্ধেক দূরত্ব) সম্পন্ন করেন আরাফাত। এর আগে তিনি ২০১৭ সালে আয়রনম্যান মালয়েশিয়া, ২০১৯ সালে জার্মানিতে আয়রনম্যান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, আয়রনম্যান মালয়েশিয়া এবং ২০২০ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান ৭০ দশমিক ৩ চ্যালেঞ্জ সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাতের দৌড়
ছবি: সংগৃহীত

আয়রনম্যান আরাফাত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ১০০০ কিলোমিটার দৌড়ে এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলা চ্যানেল সাঁতারে আটবার সফল হয়ে দেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছেন। কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে আয়রনম্যান হিসেবে গড়ে তুলেছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কঠিনতম ক্রীড়ায় সাফল্য পেয়েছেন। গত বছরের নভেম্বরে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নির্মাতা রেদওয়ান রনি তৈরি করেন তথ্যচিত্র ‘আয়রনম্যান আরাফাত’।

আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আরাফাতকে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো। সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে ডাবর হানি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স লিমিটেড, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই), হোন্ডা বাংলাদেশ-ডিএইচএস মোটরস লিমিটেড ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন