আল-জাজিরা কি আওয়ামী লীগবিরোধী

রয়টার্স ফাইল ছবি।

‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্র প্রচারের পর বাংলাদেশে যে ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং যেভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে আল–জাজিরা উদ্বিগ্ন। তথ্যচিত্রের প্রযোজক উইলিয়াম থোর্ন বিবিসি বাংলাকে এ কথা বলেছেন।

২১ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলার অনলাইন সংস্করণে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তথ্যচিত্রের প্রযোজক উইলিয়াম থোর্নের সঙ্গে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার মাসুদ হাসান খান।

উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের তথ্যচিত্র প্রথম প্রচারের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনের আরেকটি অংশ: আল–জাজিরা কি আওয়ামী লীগবিরোধী

তথ্যচিত্রটি প্রচারের পর থেকে বাংলাদেশের সরকারি দলের সমর্থকেরা আল–জাজিরার বিরুদ্ধে জামায়াতঘনিষ্ঠতা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছেন।

এ অভিযোগ কতটা সত্যি, তা জানতে চাইলে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’-এর প্রযোজক উইলিয়াম থোর্ন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এ প্রতিবেদনে অনিয়মগুলো তুলে ধরা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দলকে নিয়ে এর কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল না।’

উইলিয়াম থোর্ন আরও বলেন, ‘আমরা শুধু পেশাদার সাংবাদিকতা করেছি। এবং তথ্য-উপাত্তকে অনুসরণ করেছি। এ প্রতিবেদন এরই একটি ক্ল্যাসিক উদাহরণ।’

‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ কি স্বাভাবিক অনুসন্ধানের ফসল

উইলিয়াম থোর্নের কাছে বিবিসি বাংলা জানতে চেয়েছিল, তাঁরা যে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন, সেটি কি নিয়মিত অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, নাকি বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাঁদের এ ধরনের আইডিয়া সরবরাহ করেছে। অর্থাৎ, এটা কোনো পরিকল্পনার ফসল ছিল কি না।

জবাবে উইলিয়াম থোর্ন বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনা করে এটা করা হয়নি। মানুষের আগ্রহ আছে—এমন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নিয়মিতভাবে গবেষণা করি। অনেক সময় ডকুমেন্ট, আইডিয়া ইত্যাদি লোকজন আমাদের দেয়। এই বিশেষ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কিছু প্রমাণ তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো যাচাই করে আমাদের কাছে প্রমাণগুলো খুব শক্তিশালী বলে মনে হয়েছিল। আমাদের মনে হয়েছিল, এগুলো নিয়ে আরও গবেষণা দরকার। গোড়াতে আমরা বাংলাদেশকে টার্গেট করে অনুসন্ধান শুরু করিনি। সেটা আমাদের লক্ষ্যও ছিল না। কিন্তু যেসব তথ্য পেয়েছিলাম, সেগুলোই আমাদের সেখানে নিয়ে গেছে।’

থোর্ন বলেন, হারিছ আহমেদকে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছিল হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের ভাই, যিনি পালিয়ে ছিলেন; এভাবেই একটি আরেকটির সঙ্গে উঠে এসেছে। এটা কোনো পরিকল্পিত তদন্ত ছিল না, তবে এটি ছিল তথ্যপ্রমাণনির্ভর একটি অনুসন্ধান।

কত অর্থ ব্যয় হয়েছে তথ্যচিত্র বানাতে

প্রযোজক উইলিয়াম থোর্ন বিবিসি বাংলাকে জানান, কী পরিমাণ অর্থ তাঁদের ব্যয় হয়েছে, তা নিয়ে তিনি কোনো কথা বলবেন না। তবে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে নির্ভুল ও প্রমাণভিত্তিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে যা করা দরকার, সেটিই তাঁরা ব্যয় করেছেন।

আরও পড়ুন

থোর্ন বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আমরা ভাগ্যবান যে যথেষ্ট অর্থ আমাদের ছিল অনেক সময় ব্যয় করার, তথ্য চেক করা, প্রাপ্ত তথ্য দ্বিতীয়বার যাচাই করার জন্য। তাই যা দরকার প্রতিবেদনের জন্য, সেটাই আমরা ব্যয় করেছি। আমরা সাংবাদিকতা করেছি, যাতে অ্যাকুরেসি নিশ্চিত করা হয়। আমরা ভাগ্যবান যে এ জন্য অনেক সময় আমরা হাতে পেয়েছি।’

তথ্যদাতা সামির প্রকৃত নাম কেন ব্যবহার করা হয়নি

প্রতিবেদনটিতে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে ‘সামি’ নামে সম্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু তাঁর নাম–পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। যদিও তিনি কথা বলেছেন সেখানে এবং নিজেকে গোপন করার চেষ্টা করেননি; বরং তথ্য দিতে পেরে নিজের স্বস্তির কথাও বলেছেন তিনি।

আরও পড়ুন

তাহলে প্রতিবেদনে তাঁর নাম–পরিচয় দেওয়া হলো না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠানটির প্রযোজক বলেন, ‘এটা তাঁর অনুরোধেই করা হয়েছে। এটা ঠিক যে প্রতিবেদনে তাঁকে খুশিই মনে হয়েছে, কিন্তু তাঁর নাম দেওয়া হয়নি, যা কিছুটা পরস্পরবিরোধী মনে হতে পারে। কিন্তু এটা তাঁর সিদ্ধান্ত এবং আমরা সেটাকেই শ্রদ্ধা করেছি।’

ঢাকা অফিসের কারও ওপর চাপ আছে?

আল–জাজিরা প্রতিবেদনটি প্রচারের পর বাংলাদেশে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সরকার ও সেনা সদর দপ্তর থেকে।

সে প্রেক্ষাপটেই জানতে চাওয়া হয়েছিল যে আল–জাজিরায় ঢাকায় কর্মরত কর্মীদের ওপর বা অফিসের কারও ওপর কোনো ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে কি না। বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে উইলিয়াম থোর্ন বলেন, ‘আমি এটা সরাসরি বলতে পারি না। কিন্তু আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বাংলাদেশ নিয়ে স্টোরি ফাইল করার পর ঢাকার নিউজ টিম চাপ ও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল।’