আলু-পেঁয়াজ সংরক্ষণে সহায়তা করবে নেদারল্যান্ডস

ঢাকায় নেদারল্যান্ডসের বাণিজ্যিক মিশন আসছে
ছবি: সংগৃহীত

দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি তা সংরক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির জন্য সমন্বিতভাবে সহায়তা করতে নেদারল্যান্ডস রাজি হয়েছে। আলু উৎপাদন ও সরবরাহের বিষয়েও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা এগিয়ে চলছে। ভবিষ্যতে নেদারল্যান্ডস আদা ও রসুনের ক্ষেত্রেও এভাবে সহযোগিতা করার কথা বলেছে। আলোচনা হয়েছে আম পাঠানো নিয়েও।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কৃষিমন্ত্রীর সফরের সময় এসব সহযোগিতার প্রক্রিয়া অগ্রসর হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের চাহিদা বাড়ার প্রেক্ষাপটে এসব পণ্য রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগাতে দুই দেশ সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহায়তামন্ত্রী টম ডি ব্রুইন
ছবি: সংগৃহীত

ফলসহ বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে দেশকে সব ধরনের প্রযুক্তিগত, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে নেদারল্যান্ডসের একটি বাণিজ্যিক মিশন আগামী বছরের শুরুতে ঢাকায় আসছে।

গত বৃহস্পতিবার দ্য হেগে নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহায়তামন্ত্রী টম ডি ব্রুইন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে আলোচনার সময় এই আশ্বাস দেন। গত মঙ্গলবার থেকে পাঁচ দিনের সফরে কৃষিমন্ত্রী এখন নেদারল্যান্ডসে রয়েছেন।
প্রায় ছয় বছরের বিরতির পর দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সরকারি এই সফরে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ, স্কয়ার, এসিআই, মেঘনা এবং জেমকনের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরাও সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কৃষিমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহায়তামন্ত্রী ছাড়াও দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ওয়াজেনিনজেন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট, শীর্ষস্থানীয় কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

গতকাল শুক্রবার নেদারল্যান্ডস থেকে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে কৃষি উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছি। তাই কীভাবে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারি, এ জন্য নেদারল্যান্ডসের কারিগরি ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহায়তা চেয়েছি। ডাচ বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়গুলো ঠিক করতে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে তিনি ঢাকায় এখানকার একটি বাণিজ্যিক মিশন পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। এটি এই সফরের একটি বড় সাফল্য। কারণ, বাণিজ্যিক মিশন নেওয়াটা বেশ দুরূহ।’
কৃষিমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশের আমের স্বাদের কথা এরই মধ্যে নেদারল্যান্ডসের লোকজন জেনেছেন। এ ক্ষেত্রে আমসহ অন্যান্য পণ্য উন্নত বিশ্বের বাজারে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রসেসিং ও প্যাকেজিংয়ের সমস্যা আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার উদ্যোগটি নেদারল্যান্ডসে প্রশংসা পেয়েছে। কারণ, সরকারি প্রতিনিধিদলের সফর বিনিময়ে কার্যকরভাবে আর ফলোআপ হয় না। এবার বেসরকারি প্রতিনিধিদল যুক্ত থাকায় কার্যকর সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, নেদারল্যান্ডসের ওয়াজেনিনজেন ইউনিভার্সিটি কৃষি খাতের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কিংবা আলাদাভাবে বাংলাদেশ সফরে যাবেন। মূলত বাংলাদেশে কৃষি খাতে গবেষণায় কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি সহযোগিতা করবে, তা নিয়ে এ সময় বিস্তারিত আলোচনা হবে।

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে নেদারল্যান্ডস সফরের সময় এ বিষয়টি নিয়ে কৃষিমন্ত্রী আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা নিয়ে একপর্যায়ে এসে পেঁয়াজের রপ্তানির সুযোগও রয়েছে বলে জানা গেছে।