আলোকিত তরুণেরাই দেশটাকে সুন্দর করবে

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আর তরুণেরাই দেশের মূল চালিকাশক্তি। তাই তরুণেরা দেশ গড়লে দেশ এগিয়ে যাবে। তবে এর জন্য তরুণদের মাদক থেকে মুক্ত থাকতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের কাজটা ভালোভাবে করে আলোকিত মানুষ হতে হবে। আলোকিত তারুণ্যের শক্তিতেই বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হবে।
জীবন দক্ষতা ও সামাজিক সংহতি নিয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল কর্মশালায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব কথা বলেন আলোচকেরা। ‘তারুণ্যের শক্তিতেই সমৃদ্ধ হবে স্বদেশ’ শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে জনস হপকিন্স সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। সহযোগিতায় ছিল জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। কর্মশালা প্রথম আলো বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি প্রচার করা হয়। কর্মশালার সঙ্গে যুক্ত ছিল বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার ও নাফ রেডিও।
কর্মশালা চলার সময় সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও শিক্ষক তাহসান খান ঢাকার বাইরে একটি শুটিংয়ের কাজ করছিলেন। এর ফাঁকেই তিনি কর্মশালায় অনলাইনে যুক্ত হন। তাহসান তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় যেটা শেখানো হয় না, তা হচ্ছে নিজের অনুভূতিকে বোঝা ও শেখা। নিজের অনুভূতিকে বোঝা ও জানাটা অনেক জরুরি। কারণ, অনুভূতিগুলোকে না বুঝতে পেরে তরুণেরা মাদক নেয় বা বিপথে যায়। তিনি বলেন, বাড়ন্ত বয়সে নেতিবাচক চিন্তাটা আসাটাই স্বাভাবিক। তবে নেতিবাচক চিন্তা মানেই জীবনে হেরে যাওয়া নয়। প্রত্যেকেই জীবনে সংগ্রাম করছে ও কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর জীবনে পরিপক্বতা আসে যখন তরুণেরা অনুভূতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে।

তাহসান খান বলেন, ‘তোমরা অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দাও। জীবনে কোনো কিছু না পেলেই হতাশ হওয়া যাবে না, দুর্বল হওয়া যাবে না। বরং, ম্যাচিউরড আচরণ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
কর্মশালায় তরুণদের জীবন দক্ষতা ও সামাজিক সংহতি বিষয়ে কথা বলেন কথাসাহিত্যিক, বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, মাদকমুক্ত থাকা তরুণদের কর্তব্য। তারুণ্যই পারে মাদককে ‘না’ বলে আধুনিকতার পরিচয় দিতে। কারণ, তরুণেরা নিজেরা সুন্দর হলে এই দেশটাও আরও সুন্দর হবে।


আনিসুল হক বলেন, তিনটি কাজ গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। প্রথম কাজ, ধর্মীয় উগ্রতাকে জায়গা না দেওয়া। দ্বিতীয় কাজ, মাদক থেকে দূরে থাকা ও তৃতীয় কাজ, পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য যেকোনো কাজ শিখে রাখা। তাহলেই তরুণেরা বড় মানুষের জীবনের আলোকে নিজের জীবনে ধারণ করে আলোকিত মানুষ হয়ে আলো ছড়াতে পারবে।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান প্রধান মুনির হাসান বলেন, জীবনটা একটা লড়াই। তাই জীবনে যেন আক্ষেপ না আসে। ২০ বছর পরে গিয়ে যেন মনে না হয়, ২০ বছর আগে এই কাজটি করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, নিজের যা ভালো লাগে, সেটা এখনই করতে হবে, বলতে হবে। নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে হবে। যদি জীবনে বাধা আসে, পার হওয়ার কৌশল জানতে হবে।

জনস হপকিন্স সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস-এর ডেপুটি চিফ অব পার্টি কাজী ফয়সাল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারে কমিউনিটি রেডিওতে অনুষ্ঠান তৈরিতে তরুণদের অনেক ভূমিকা আছে। তরুণেরাই বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে সেসব অনুষ্ঠানের বার্তা আবার তরুণেরাই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করছে।
বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, কক্সবাজারে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন, অধিকার ও ক্ষমতায়ন, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তরুণদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে।
রেডিও নাফ-এর চিফ এক্সিকিউটিভ তরিকুল ইসলাম বলেন, নাফ রেডিওর মাধ্যমে এই অঞ্চলে তরুণদের নানা কার্যক্রমে যুব-তরুণের সম্পৃক্ত হচ্ছে। তরুণেরা নিজে সচেতন হয়ে কমিউনিটির মধ্যে ভূমিকা পালন করছে।
প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মৌসুমী মৌ–এর সঞ্চালনায় কর্মশালায় বন্ধুসভার সভাপতি মুমিত আল রশিদ, অর্থ সম্পাদক জাফর সাদিক, কক্সবাজারের কৈশোর অগ্রদূত ক্লাবের সদস্য রাকিবুল ইসলাম, সৈয়দা মারুফা, ইয়াসমিন সুলতানা প্রমুখ বক্তব্য দেন।