আলোর ক্যাম্পের আনন্দে

আলোর ক্যাম্প শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির নতুন নতুন তথ্য জানার সুযোগ করে দিয়েছে
আলোর ক্যাম্প শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির নতুন নতুন তথ্য জানার সুযোগ করে দিয়েছে

কর্মশালার শেষ ক্লাসটি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যারাতেই। কিন্তু ভোররাত চারটায়ও রাজশাহী আই-জেন আবাসিক ক্যাম্পের সেমিনারকক্ষে দেখা মিলল ব্যস্ত ক্যাম্পারদের। আজই ওয়েবসাইট তৈরি করা শিখেছে ওরা। শুরুতেই প্রিয় স্কুলের ওয়েবসাইট তৈরির সুযোগ।
উৎসাহের তোড়জোড় যেন বাড়ছে রাতের সঙ্গে। ভোররাতে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিজেদের কক্ষে পাঠানো হলেও সেখান থেকে ভেসে আসছে গিটারের টুংটাং। এরই মধ্যে চলছে উপস্থাপনের মহড়া; সকালে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের স্কুলকে তুলে ধরতে হবে সবার সামনে। ক্লান্তি যেন বহুদূর। রংপুর থেকে ময়মনসিংহ, সিলেট কিংবা রাজশাহীÑ আলোর ক্যাম্পের উচ্ছ্বাসের চিত্রটা প্রায় একই।
আই-জেনের তৃতীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় আট অঞ্চলে অংশ নিচ্ছে ৬৪ জেলার সেরা স্কুল দলগুলো। তিন দিনের এই আবাসিক ক্যাম্প থেকে প্রতি অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হচ্ছে একটি জেলা দল। পাঁচজনের ওই স্কুল দলটিই আই-জেনের চূড়ান্ত পর্বে প্রতিনিধিত্ব করবে নিজ অঞ্চলের, নিজ জেলার।

শেখার ক্যাম্প, জানার ক্যাম্প
আই-জেন ক্যাম্পে মূলত স্কুলপর্যায়ের এই শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির মৌলিক কিছু বিষয়ে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিন দিনে পাঁচটি মূল সেশন থাকছে এতে। এর মধ্যে প্রথম সেশনটি ইন্টারনেটের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে। ইন্টরনেট কী, এটি কীভাবে কাজ করে?—এসব বিষয়ের পাশাপাশি ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় এতে। একটি ই-মেইল কিংবা মেসেঞ্জারের খুদে বার্তা কীভাবে নিমেষেই ময়মনসিংহ থেকে নিউইয়র্ক চলে যাচ্ছে, সেটি রোমাঞ্চিত করছে নেত্রকোনার চিত্রা পাল থেকে মৌলভীবাজারের নাফিজাকে।
পরের সেশনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পদচিহ্ন এঁকে যাই’। এই সেশন থেকে উইকিপিডিয়া কিংবা গুগল ট্রান্সলেটে নিজে অবদান রাখতে শিখছে শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় সেশনটি ইন্টারনেটে নিরাপত্তা বিষয়ে। ইন্টারনেটের মুক্ত দুনিয়ায় নিজেকে নিরাপদ রাখার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে এই কিশোর-কিশোরীদের।
তবে আই-জেন ক্যাম্পের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ওয়েবসাইট তৈরির প্রশিক্ষণ ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের প্রাথমিক ধারণার সেশন দুটি। ওয়ার্ডপ্রেস ফ্রেমওয়ার্কে নিজের মতো কাস্টমাইজ ওয়েবসাইট তৈরি শেখানো হচ্ছে এতে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা তৈরি করছে নিজের স্কুলের ওয়েবসাইট। প্রোগ্রামিংয়ের প্রাথমিক ধারণা দিতে ক্যাম্পারদের দেওয়া হচ্ছে ‘আওয়ার অব কোড’-এ হাতেখড়ি।
এই পাঁচটি মূল বিষয়ে থাকছে আরও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও আলোচনা। শিক্ষার্থীদের জানানো হচ্ছে ডিজিটাল লাইফস্টাইলের সর্বশেষ হালচাল সম্পর্কে। থাকছে শুদ্ধ উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি ও উপস্থাপনা বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এর বাইরে ক্যাম্পে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে আসছেন বিশিষ্টজনেরা। রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মজার সময় কাটান বিনা পয়সায় বই বিলানো আলোর ফেরিওয়ালা পলান সরকার।
রাজশাহীতে আই-জেনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি বিশেষ সেশনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীভ শেঠি, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান ও প্রথম আলোর প্রধান ব্যবসায়িক কর্মকর্তা তানভীর আহমাদ। তাঁদের কাছে সাফল্যের গল্প, স্বপ্ন, প্রস্তুতিসহ অনেক প্রশ্ন ছিল আই-জিনিয়াসদের। সিলেটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একই ধরনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন গ্রামীণফোনের বিপণন পরিচালক নেহাল আহমেদ।

আলোর ক্যাম্পে আনন্দ মেলা
রংপুর ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনে মধ্যরাতে চলছে ওয়েবসাইট তৈরির কাজ। হঠাৎ মঞ্চে দেখা গেল দিনাজপুর জিলা স্কুলের মাহফুজ নোবেলকে। প্রিয় গানের সঙ্গে নেচে সবার চোখের ঘুম তাড়িয়ে দিল সে। প্রশিক্ষণের ফাঁকে ফাঁকে নাচে-গানে, গল্প-আড্ডার জমজমাট আয়োজনে এমনই আনন্দময় সময় কাটিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যাম্পারদের জন্য সবচেয়ে মজার ছিল ক্যাম্পফায়ার। মধ্যরাতে কাঠের আগুন ঘিরে ছিল শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় জমজমাট সাংস্কৃতিক আয়োজন। সবাই কিছু না কিছু করেছে। রংপুরে খালি থলে থেকে টাকা বের করার জাদু দেখিয়েছে পঞ্চগড় সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের আই-জেন দল। সিলেটের ফারহানা আর মৌলভীবাজারের নাফিজার যুগলবন্দী নাচের পরিবেশনায় মুগ্ধ সবাই। এমন নাচ, গান, কবিতা, গল্প আর কৌতুকে তুমুল হাততালি আর উল্লাসে মেতেছিল ক্যাম্পফায়ারের খোলা মাঠ।
বিকেলে ছিল খেলার আয়োজন। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে বাস্কেটে বল ফেলা কিংবা লক্ষ্যে তির ছোড়ার প্রতিযোগিতা সবই ছিল। তবে সবচেয়ে রোমাঞ্চ করছিল গুপ্তধন খোঁজার প্রতিযোগিতা ট্রেজার হান্ট। এখানকার পাঁচটি সমস্যার সমাধান করে তারা পেয়েছে ধাঁধা বোর্ডের পাঁচটি টুকরো। সবগুলো পেয়ে গেলেই মিলে গেছে একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি; কখনো বাংলাদেশের মানচিত্র কখনো আই-জেনের লোগো।
ক্যাম্পে তৃতীয় দিন নির্ধারিত ছিল দলীয় উপস্থাপনার জন্য। প্রতিটি দল নিজেদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের স্কুলকে তুলে ধরে সবার সামনে। এ ছাড়া প্রতিটি সেশনের পর ছিল পরীক্ষা ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা। এ থেকেই একটি দল উঠে আসে চূড়ান্ত পর্বের জন্য। শিগগিরই আট অঞ্চলের সেরা এই দলগুলো নিয়ে শুরু হবে আই-জেনের জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। টিভি রিয়েলিটিসহ চমকপ্রদ সব অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর উদ্যোগে আই-জেন আয়োজনে সহযোগী হিসেবে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সহযোগিতা করছে অ্যালপেনলিবে, মাইক্রোসফট, ওপেরা মিনি, এখানেই ডট কম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, উরি ব্যাংক, রেডিও ফুর্তি ও চ্যানেল আই।
সারা দেশে এ বছর আই-জেনে অংশ নিয়েছে দুই হাজার স্কুলের ৮ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী। এখন চলছে আই-জেনের তৃতীয় পর্যায়, তথা আঞ্চলিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। আই-জেনের বিস্তারিত জানা যাবে. www.prothom-alo.com/igen এবং www.facebook.com/IGEN এই ঠিকানায়।

অঞ্চল: রাজশাহী

রাজশাহী
রাজশাহী

বিজয়ী স্কুল
কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

রাজশাহী অঞ্চলে বিজয়ী দল কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
রাজশাহী অঞ্চলে বিজয়ী দল কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

বিজয়ী দলের সদস্য
১. নুসরাত ইমরোজ
২. আনিকা হোসেন
৩. নহলি আকাশলীনা
৪. সাজিয়া ফারজানা
৫. তাসমিয়া তাবাসসুম
ক্যাম্প:
রাজশাহীর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার, ১০–১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অংশগ্রহণকারী স্কুল
অংশগ্রহণকারী ৯টি স্কুলের মধ্যে রয়েছে গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, হরিমোহন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বগুড়া ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাটোর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।

অঞ্চল: সিলেট

সিলেট
সিলেট

বিজয়ী স্কুল
হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়

সিলেট অঞ্চলে বিজয়ী দল হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়
সিলেট অঞ্চলে বিজয়ী দল হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়

বিজয়ী দলের সদস্য
১. আবির হাসান
২. ইশতিয়াক আহমেদ পরাগ
৩. আহমেদ জোহান
৪. প্লাবন তালুকদার
৫. ইকবাল হোছাইন
ক্যাম্প:

সিলেট ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার,
১০–১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অংশগ্রহণকারী স্কুল
অংশগ্রহণকারী ৭টি স্কুলের মধ্যে রয়েছে, ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি এসসি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, দ্য ফ্লাওয়ার্স কেজি অ্যান্ড হাইস্কুল, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, অ্যাথনিকা অ্যান ইংলিশ ভার্সন স্কুল ও জনতা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়

অঞ্চল: রংপুর

রংপুর
রংপুর

বিজয়ী স্কুল
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়

রংপুর অঞ্চলে বিজয়ী দল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়
রংপুর অঞ্চলে বিজয়ী দল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়

বিজয়ী দলের সদস্য
১. ইমামুন নূর
২. শফিউর রহমান
৩. সৌগত দেবনাথ
৪. রিফাদুজ্জামান রিফাদ
৫. সাহেদ হোসেন
ক্যাম্প : রংপুরের ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার,

৩–৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অংশগ্রহণকারী স্কুল
অংশগ্রহণকারী ৮টি স্কুলের মধ্যে রয়েছে, দ্য মিলেনিয়াম স্টার্স, বিপি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ফাকল পুলিশ লাইনস স্কুল, দিনাজপুর জিলা স্কুল ও গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়।

অঞ্চল: ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ

বিজয়ী স্কুল
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিজয়ী দল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়
ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিজয়ী দল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়

বিজয়ী দলের সদস্য
১. মুকতাদির মাহাদী
২. রাশেদ জামাল
৩. তন্ময় চক্রবর্তী
৪. ফারজানা আখতার
৫. সামিহা বিনতে মকবুল
ক্যাম্প: ময়মনসিংহ ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার, ৩–৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫।

অংশগ্রহণকারী স্কুল
অংশগ্রহণকারী ৭টি স্কুলের মধ্যে রয়েছে, নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুল, জামালপুর জিলা স্কুল, শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমি, আফতাব উদ্দীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়।