আশঙ্কা এখন দুঃসহ বাস্তবতা

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ভিন্নমত দমন, গণমাধ্যম ও বাক্স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে সরকারের বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা এবং ভিন্নমত দমনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হবে—শুরু থেকেই নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠন এই আশঙ্কার কথা বলে আসছিল। বাস্তবেও দেখা গেছে, গত প্রায় আড়াই বছরে এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানত বেছে নেওয়া হয়েছে মুক্তমনা লেখক, সাংবাদিক ও সরকারের সমালোচনাকারীদের।

ফলে যে ভয় ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে, তা-ই এখন দুঃসহ বাস্তবতা। এই আইনে ৯ মাস আগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বিষয়টি আবারও জোরালোভাবে আলোচনায় এসেছে। হয়রানি-নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে ওঠার এই আইন সংশোধনের দাবি বারবার উঠলেও এখন পর্যন্ত সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। উল্টো কথিত ষড়যন্ত্র, ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ তৎপরতার অভিযোগ তুলে এই আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। এই আইন গণমাধ্যম ও মানুষের বাক্স্বাধীনতাকে হরণ করছে—এমনটি শুরু থেকেই বলে আসছে দেশি–বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন প্রবর্তন করা হয়েছিল, তখনই এর অপব্যবহার হবে বলে সন্দেহ হচ্ছিল। দিনে দিনে সেই সন্দেহই বাস্তব হয়েছে। এর ব্যাপক অপপ্রয়োগ হচ্ছে। যাকে–তাকে ধরা হচ্ছে, তুলে নেওয়া হচ্ছে ।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক

অযৌক্তিকভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট– সিপিজে। আর দেশে মানবাধিকার, উন্নয়ন ও নাগরিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ২০টি সংগঠনের জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপক অপব্যবহার স্বাধীন চিন্তা. মতপ্রকাশ, তথ্য পাওয়ার অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অধিকারকে মারাত্মকভাবে খর্ব করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যখন প্রবর্তন করা হয়েছিল, তখনই এর অপব্যবহার হবে বলে সন্দেহ হচ্ছিল। দিনে দিনে সেই সন্দেহই বাস্তব হয়েছে। এর ব্যাপক অপপ্রয়োগ হচ্ছে। যাকে–তাকে ধরা হচ্ছে, তুলে নেওয়া হচ্ছে। জামিন দেওয়া হচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আর রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই আইন যে বাতিল করা প্রয়োজন, তা লেখক মুশতাকের মৃত্যুতেই প্রমাণিত হয়।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল–১৯–এর তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত বছরই সারা দেশে লেখক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে অন্তত ৪১টি। এসব মামলায় ৭৫ জন লেখক ও সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২ জন। গত বছর বিভিন্ন পেশার ৩৬৮ জনের বিরুদ্ধে এই আইনে ১৯৭টি মামলা হয়েছে।

অবশ্য পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, সংখ্যাটি আরও বেশি। গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই এই আইনে মামলা হয় ৪০৩টি, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৫৩ জন। এরপরের সাত মাসের হিসাব পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আর পাওয়া যায়নি।

গত বছর সারা দেশে এই আইনে কত মামলা হয়েছে, কতজন আসামি, গ্রেপ্তার কতজন, তা পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানার কাছে এ বছরের ৪ জানুয়ারি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেড় মাস পরও সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।

দেশে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে করা অপরাধ দমন, প্রতিরোধ ও বিচারের জন্য ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন হয়। ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে ৫৭ নম্বর ধারা যুক্ত করা হয়। এই ধারায় মানহানি, কটূক্তি, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ একগুচ্ছ অভিযোগে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেখালেখি সম্প্রচারের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রবল সমালোচনার মুখে এ আইন বাতিল হয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে আসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। নতুন এই আইনে দেখা যায়, কয়েকটি ধারায় পুরোনা ৫৭ ধারার নির্যাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে তথ্য ও মতপ্রকাশে আরও কিছু কড়া বাধা যুক্ত করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।

এই আইনে গত বছরে হওয়া ১৯৭টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে প্রথম আলো। এতে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে ‘কটূক্তি’, ‘মানহানিকর বক্তব্য’, ‘বিকৃত ছবি শেয়ার’, ‘গুজব ছড়ানো’ আর ‘সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’-জাতীয় অভিযোগে। প্রায় ৮০ শতাংশ মামলার বাদী পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। আসামিদের মধ্যে পেশা বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন সাংবাদিকেরা।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে, এই আশঙ্কার কথা শুরু থেকেই বলে আসছে সম্পাদক পরিষদ। সম্পাদকদের এই সংগঠন বলেছে, এই আইনের নয়টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আইনটি সংশোধনের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর মানবন্ধন করেছিল সম্পাদক পরিষদ।

সর্বশেষ লেখক মুশতাক ও কার্টুনিস্ট কিশোর গ্রেপ্তারের ঘটনায় সম্পাদক পরিষদ বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, আইনটি নিয়ে সম্পাদক পরিষদের সেই শঙ্কা এখন গণমাধ্যমের জন্য দুঃস্বপ্নের বাস্তবতা।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই ছিল। এর বিরুদ্ধে আমরা প্রেসক্লাবে সেমিনার করেছি, মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেছি, যা আগে কখনো হয়নি। শুধু তা–ই নয় আইনটি প্রণয়নের পর এর সংশোধনের জন্য আইনমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সঙ্গে দফায় দফায় বসেছি। আমরা বলেছি, আইনটি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই আইন গণমাধ্যম ও মুক্তচিন্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমাদের অবস্থান একই আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি আইনটির সংশোধন চাই।’

মামলার বাদী হচ্ছেন যাঁরা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকসহ চারজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। রায়পুর পৌরসভার মেয়র ইসমাইল খোকন বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। আর দুই মাস নিখোঁজ ও ছয় মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হওয়া ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সাংসদ সাইফুজ্জামান শিখর।

১৯৭টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর মধ্যে ৮৮টির অভিযোগকারী তথা বাদীরা আওয়ামী লীগের সাংসদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক অথবা বর্তমান নেতা এবং তাঁদের অনুসারী ও স্বজনেরা। আরও ৭০টি মামলার বাদী পুলিশ।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মুক্তমত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বাতিলেরও দাবি জানিয়েছে সাংবাদিকদের সংগঠন দুটি বিএফইউজে ও ডিইউজে। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে সংগঠন দুটি (সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত) বলেছে, রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে লেখক মুশতাকের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ব্যাংক লুটেরাদের রক্ষা করতেই মুশতাকসহ অন্যদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক কালো আইনে গ্রেপ্তার করে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে তারা।

এই আইনটা রাষ্ট্র ও দলের কিছু মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এই আইন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এটা যে একটা গণতান্ত্রিক দেশ, সেটা প্রমাণিত হচ্ছে না। এর পরিবর্তন ছাড়া গণতন্ত্র সুনিশ্চিত হবে না
ফারুখ ফয়সাল , আর্টিকেল-১৯-এর আঞ্চলিক প্রধান

অভিযোগের ধরন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলার অভিযোগের ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ত্রাণ চুরি, করোনার চিকিৎসার সমালোচনা, স্থানীয় সাংসদের সমালোচনা, নদী দখল, বাড়ি দখলে রাখার অভিযোগ—এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ মামলা হয়েছে। কিছু মামলা হয়েছে চলমান বিষয়, সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে।

সরকারের দেওয়া ত্রাণের চাল চুরির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় গত বছরের ১৭ এপ্রিল চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থানায় মামলা করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম। মামলায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে চাল চুরির অভিযোগে এক জনপ্রতিনিধিকে (ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য) বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, ধরমপাশা, জামালগঞ্জ) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার। ওই পোস্টে সাংসদের মানহানি হয়েছে এমন অভিযোগে গত বছরের ১৯ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে গতকাল চট্টগ্রামে এক ব্রিফিংয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনলাইনে যখন একজন সাংবাদিকের চরিত্র হনন করা হয়, একজন গৃহিণীকে যখন অপবাদ দেওয়া হয়, একজন সাধারণ মানুষ যখন ডিজিটাল আক্রমণের শিকার হন, তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন, কোন আইনের বলে নিরাপত্তা পাবেন; সে জন্য একটা আইনের দরকার। এ জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তিনি বলেন, এই আইনের অপব্যবহার যাতে না হয়, সে জন্য সরকার সচেতন রয়েছে। বিশেষত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাতে এই আইনের অপব্যবহার না হয়, সে জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তিগতভাবে তিনি সব সময় সচেতন।

প্রথম আলো যে ১৯৭টি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে, সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৮টি মামলা হয়েছে সরকারদলীয় মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি বা নেতা-কর্মীদের নিয়ে ‘মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশন, ফেসবুকে ‘মিথ্যা তথ্য’ দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে। ৪০টি মামলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি বা ছবি বিকৃত করে শেয়ার করার অভিযোগে। ৩০টি মামলা হয়েছে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে। এ ছাড়া শেখ কামালের জন্মদিন নিয়ে কটূক্তি, সরকারবিরোধী প্রচারণা, পুলিশের সমালোচনা করে সংবাদ পরিবেশন করা, মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদীর পক্ষে ফেসবুকে লেখা, হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা আহমদ শফীকে নিয়ে কটূক্তি করা—এসব অভিযোগেও মামলা হয়েছে।

আর্টিকেল-১৯-এর আঞ্চলিক প্রধান ফারুখ ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, এই আইনটা রাষ্ট্র ও দলের কিছু মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এই আইন বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এটা যে একটা গণতান্ত্রিক দেশ, সেটা প্রমাণিত হচ্ছে না। এর পরিবর্তন ছাড়া গণতন্ত্র সুনিশ্চিত হবে না।

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের বিষয়টি আর কোথাও নেই। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সরকার, রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকে অপরাধ হিসেবে দেখার অর্থ হলো বাক্স্বাধীনতা খর্ব করা। এ ধরনের আইন আছে এবং দেশে বাক্স্বাধীনতা আছে—এটা পরস্পরবিরোধী ধারণা। তিনি বলেন, আইনটি বাতিল হওয়া তো পরের কথা, এটি প্রণয়ন হওয়াই উচিত ছিল না।
শাহদীন মালিক, বিশিষ্ট আইনজীবী

বেশির ভাগ অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে না

আগের আইসিটি আইন ও বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা সারা দেশের মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে। এই আদালতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলা এসেছে ২ হাজার ৬৮২টি। এর অর্ধেকের বেশি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলা।

ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গত সাত বছরে ৯৯০টির মতো মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে চার শর বেশি মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হয়। অনেক মামলায় অভিযোগ গঠনের উপাদান না থাকায় আসামিরা অব্যাহতি পান। তথ্য-উপাত্ত বলছে, কেবল ২৫টি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। এর ২৪টি আইসিটি আইনের এবং একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা।

বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের বিষয়টি আর কোথাও নেই। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সরকার, রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকে অপরাধ হিসেবে দেখার অর্থ হলো বাক্স্বাধীনতা খর্ব করা। এ ধরনের আইন আছে এবং দেশে বাক্স্বাধীনতা আছে—এটা পরস্পরবিরোধী ধারণা। তিনি বলেন, আইনটি বাতিল হওয়া তো পরের কথা, এটি প্রণয়ন হওয়াই উচিত ছিল না।