আশ্বাসে বাড়ি ফিরে গেলেন শ্রমিকেরা

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

দ্বিতীয় দফায় টানা পাঁচ দিন আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করার পর বাড়ি ফিরেছেন খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকেরা। এবারও আশ্বাসের ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে এবারের আশ্বাসে বুক বাঁধছেন শ্রমিকেরা।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলশ্রমিকদের মজুরি কমিশনের স্লিপ দেওয়ার আশ্বাস পেয়ে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ওই কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিকনেতারা। 

নেতাদের ঘোষণার পরও অনশনস্থল ত্যাগ করা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন শ্রমিকেরা। অনেকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পক্ষে থাকলেও বেশির ভাগ শ্রমিক ঢাকা থেকে নেতাদের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকতে চেয়েছিলেন। এমন দ্বিধার মধ্যে রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কে অবস্থান নেওয়া ক্রিসেন্ট ও খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকেরা অনশনস্থল ত্যাগ করে বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু প্লাটিনাম, স্টার ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকেরা অনশনস্থলে ছিলেন। ভোররাতের দিকে আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করলে ওই তিন মিলের শ্রমিকেরাও বাড়ি ফিরে যান। 

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ঢাকায় জুট ডাইভারসেফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) সম্মেলনকক্ষে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, বিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক থেকে বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের জাতীয় মজুরি স্কেল-২০১৫-এর মজুরি স্লিপ দেওয়ার আশ্বাস দেন। লিখিত ওই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। 

রাত ১২টার দিকে খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, সবাই শুনেছেন প্রত্যাহারের ঘোষণা কিন্তু শ্রমিকেরা অনশনস্থল ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না। এর আগে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনশন ভেঙে ফিরে গেলেও আবার অনশনে বসতে হয়েছে। এ কারণে শ্রমিকেরা মনে করছেন, নেতারা ঢাকা থেকে খুলনায় ফিরে নিজেরাই ঘোষণা দেবেন। তারপর শ্রমিকেরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

শ্রমিকেরা অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন–সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে। ওই সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাবেক সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিজেএমসি থেকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। রাতেই প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের বাড়ি ফিরে যেতে বলা হয়েছিল। এরপরও অনেক শ্রমিক অনশনস্থলে ছিলেন। কারণ, তাঁরা নেতাদের মুখ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইছিলেন। 

খুলনা অঞ্চলে মোট রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় সাতটি ও যশোরে রয়েছে দুটি। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। আর যশোরের দুটি জুট মিল হলো কার্পেটিং ও জেজেআই।

অনশন কর্মসূচি কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকে। তবে যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের আংশিক শ্রমিক অনশন চলছিল। এ কারণে ওই দুটি পাটকল বন্ধ হয়নি।

বিভিন্ন পাটকলের কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁদের হতাশার কথা। এখনো অনেকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না এবারও মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হবে কি না। তাঁরা বলেন, এর আগে বিভিন্ন সময় মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন নিয়ে কঠোর আন্দোলন হয়েছে। দিনরাত রাজপথে থাকতে হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রতিবারই আশ্বাস পাওয়া গেছে কিন্তু কোনোবারই তা বাস্তবায়ন হয়নি।

তাঁরা আরও বলেন, চলতি আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রথম দফা টানা চার দিন অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়েছিল। তখনো শ্রম প্রতিমন্ত্রীর
আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। তিনি মাত্র তিন দিন সময় চেয়েছিলেন। ওই সময় প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে তিনি নিজেই শ্রমিকদের সঙ্গে অনশনে যোগ দেবেন। তিন দিনের জায়গায় প্রায় ১৫ দিন কেটে গেছে।
কিন্তু তিন দফা বৈঠক করেও কোনো ভালো খবর পাওয়া যায়নি। 

মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাটকলে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) ব্যবস্থা বাতিল, পাট খাতে পযাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা। ১১ দফা দাবি হলেও শ্রমিকদের প্রধান দাবি ছিল পাট খাতে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা। 

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে একই জায়গায় আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন শ্রমিকেরা। টানা চার দিন অনশন চলার পর ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং খুলনা-৩ আসনের সাংসদ বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনশন ভঙ্গ করে বাড়ি ফিরে যান শ্রমিকেরা।