আসছে মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞানকোষ

এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশউইকিপিডিয়া

বাংলাপিডিয়ার পর এবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এনসাইক্লোিপডিয়া প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। এর ইংরেজি নাম হবে এনসাইক্লোিপডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন। বাংলায় এর নাম হবে মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞানকোষ।
বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় পাঁচ খণ্ড করে মোট দশ খণ্ডে এটি প্রকাশিত হবে। ছাপা অক্ষরের পাশাপাশি অনলাইন ও ডিভিডিতেও এটি পাওয়া যাবে।
গতকাল শুক্রবার জ্ঞানকোষ রচনার কৌশল ও পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে এশিয়াটিক সোসাইটিতে একটি কর্মশালা ও দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ গবেষকসহ বিশেষজ্ঞরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের এই জ্ঞানকোষ তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত, প্রাথমিক প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধের সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্ব, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বধ্যভূমি, গণকবর, নারী নির্যাতন ও যুদ্ধশিশু, পাকিস্তানি বাহিনীর এদেশীয় সহযোগী, শরণার্থী শিবির, ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বৃহৎ শক্তিগুলোর ভূমিকা, জাতিসংঘের ভূমিকা, গণমাধ্যমের ভূমিকাসহ মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত সবই থাকবে এই কোষে।

এশিয়াটিক সোসাইটির এই প্রকল্পে অর্থসহায়তা দিচ্ছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এটি প্রকাশ করতে মোট খরচ হবে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদকে মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষের প্রধান সম্পাদক ও প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক সাজাহান মিয়া কাজ করবেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে।
ড. হারুন-অর-রশিদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় ক্ষেত্রে একটি বড় মাপের কাজ সম্পন্ন হবে এবং এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বড় ধরনের গবেষণাসংক্রান্ত শূন্যতার অবসান ঘটবে।’
মুক্তিযুদ্ধের এই জ্ঞানকোষ তৈরির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাইলে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ১৫ খণ্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (১৯৮২), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাত খণ্ডে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (২০০৮), বাংলা একাডেমির পাঁচ খণ্ডে মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস (২০১২, ২০১৪), বাংলাদেশ পুলিশের চার খণ্ডে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা (২০১২, ২০১৩), অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ১২ খণ্ডে মুক্তিযুদ্ধ কোষ (২০১৩) এবং এজাতীয় আরও কিছু প্রকাশনা থাকলেও এগুলো তথ্যসামগ্রীর দলিলীকরণ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের আংশিক বিবরণ। এ জন্য এশিয়াটিক সোসাইটির কাউন্সিল ও সাধারণ সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকোষ করার তাগিদ অনুভব করেন।
এর আগে এশিয়াটিক সোসাইটি ২০০৩ সালে ১০ খণ্ডে বাংলাপিডিয়া বা জাতীয় জ্ঞানকোষ প্রকাশ করে। এরপর ২০০৭ সালে ১২ খণ্ডে কালচারাল সার্ভে অব বাংলাদেশ এবং ২০১১ সালে ২৮ খণ্ডে ফ্লোরা ও ফনা এবং ২০১১ সালে দুই খণ্ডে ছোটদের বাংলাপিডিয়া প্রকাশ করে।

মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান ও সাক্ষাৎকার এবং বইপুস্তকসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গা থেকে এই জ্ঞানকোষের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য ৪৩২টি উপজেলায় একজন করে গবেষক ও তথ্য অনুসন্ধানকারী কাজ করবেন।
জাতীয় অধ্যাপক এ এফ এম সালাউদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে নয় সদস্যের একটি পরামর্শক কমিটি এত দিন কাজ করছিল। সালাউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ওই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
গতকাল এই জ্ঞানকোষের রচনাকৌশল ও পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম ও এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে উদ্বোধনী পর্বে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা বলার চেষ্টা করে, একটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু। কিন্তু ১৯৪৮ সালের পর প্রতিটি রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের যোগসূত্র আছে। আমাদের মুক্তির সংগ্রাম ছিল ২৩ বছরের এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ছিল নয় মাসের। এই কোষে পুরো সময়টাই আনা উচিত।’
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এই কোষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।