ইউএন বাংলা ফন্টের উদ্বোধন করল ইউএনডিপি

‘জাতিসংঘের বার্ষিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৯’ বাংলায় প্রকাশ করেছে ইউএনডিপি। ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
‘জাতিসংঘের বার্ষিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৯’ বাংলায় প্রকাশ করেছে ইউএনডিপি। ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘জাতিসংঘের বার্ষিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৯’ প্রথমবারের মতো বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। শুক্রবার ‘গড় পেরিয়ে, আয় ছাড়িয়ে, বর্তমানের ওপারে: একবিংশ শতাব্দীতে মানব উন্নয়ন অসমতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সামগ্রিক সারসংক্ষেপ বাংলায় প্রকাশ করে ঢাকায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে উন্নয়ন প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে ‘ইউএন বাংলা ফন্ট’ নামের একটি বাংলা ফন্টের উদ্বোধন করে ইউএনডিপি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক দপ্তরের সহকারী প্রশাসক ও পরিচালক কানি ইউগনারাজা ইউএন বাংলা ফন্ট ও বাংলায় জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের সামগ্রিক সারসংক্ষেপের উদ্বোধন করেন।

জাতিসংঘের বার্ষিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের সামগ্রিক সারসংক্ষেপের বাংলা অনুবাদ করেছেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক সেলিম জাহান।

জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৯ গত বছরের ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৯টি দেশের মধ্যে মানব উন্নয়ন সূচকে এক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৫তম।

প্রতিবেদন সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিবেদনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য আছে। নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্মানো শিশুর গড় আয়ু হবে ৫৯ বছর। আর উচ্চ আয়ের পরিবারে জন্মানো শিশুর আয়ু বেড়ে দাঁড়াবে ৭৮ বছর। অর্থাৎ জন্ম থেকেই নিম্ন ও উচ্চ আয়ের মধ্যে বৈষম্য শুরু হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত আমাদের ৫ থেকে ১০ লাখ কোটি ডলারের তহবিল প্রয়োজন। যার একটি অংশ সরকার সরবরাহ করবে এবং বাকি অংশ বেসরকারি খাত এবং উচ্চ আয়ের দেশ ও উন্নয়ন সংস্থাদের দেওয়ার কথা বলে জানান মন্ত্রী। উচ্চ আয়ের দেশগুলো এখন স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সহায়তা দিচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে ইউএনডিপির মতো সংস্থা বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে তিনি জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউএনডিপির প্রশংসা করে বলেন, ‘অন্যান্য অনেক দেশে জাতিসংঘের অর্থ অপচয় বা নষ্ট হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এর পরিমাণ খুব কম। এ কারণে ইউএনডিপি বাংলাদেশে একটি সফল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।’

সেলিম জাহান বলেন, ‘অসমতার সঙ্গে জড়িত সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গটি। আর অসমতা বুঝতে হলে যে পাঁচটি বক্তব্য বুঝতে হবে, তা বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রথমত, বহু মানুষের উন্নয়নে অর্জনের ন্যূনতম স্তর পেরিয়ে গেলেও এখনো বৈষম্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বিংশ শতাব্দীর অনেক অমীমাংসিত অসমতা বর্তমানে হ্রাস পেলেও নতুন আঙ্গিকের মানব উন্নয়ন অসমতার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তৃতীয়ত, জীবনব্যাপী মানব উন্নয়নে অসমতা পুঞ্জীভূত হতে পারে এবং প্রায়ই এ পুঞ্জন ক্ষমতায়নের সুগভীর বৈষম্যের কারণে অনেক বেড়ে যায়। চতুর্থত, মানব উন্নয়নে অসমতা নির্ণয়ের জন্য একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন দরকার। পঞ্চমত, একবিংশ শতাব্দীতে অসমতাকে রুখে দেওয়া সম্ভব, যদি অর্থনৈতিক অসাম্য কায়েমি রাজনৈতিক স্বার্থে পরিণত হওয়ার আগে আমরা এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে ইউএনডিপির এ–দেশীয় পরিচালক সুদীপ্ত মুখার্জি।