ইন্টারনেটের চেয়ে একটু বেশি

নয় অঞ্চলের সেরা নয়টি স্কুলদল, এদের নিয়েই চলছে আই-জেনের চূড়ান্ত পর্ব। অাই–জেন নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে চ্যানেল আই–এ প্রতি সোমবার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে। ছবি: জুয়েল রানা
নয় অঞ্চলের সেরা নয়টি স্কুলদল, এদের নিয়েই চলছে আই-জেনের চূড়ান্ত পর্ব। অাই–জেন নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে চ্যানেল আই–এ প্রতি সোমবার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে। ছবি: জুয়েল রানা

এ এক এলাহি কাণ্ড! নয়টি স্কুল দলের ৪৫ জন প্রতিযোগীর কারও কোনো ফুসরত নেই৷ যেন অ্যাডভেঞ্চারময় এক নতুন দুনিয়া৷ অদ্ভুত সব টাস্ক তাদের করতে হচ্ছে এখানে এসে৷ কখনো রান্না করতে হচ্ছে অপরিচিত কোনো রেসিপি, কখনোবা বলা হচ্ছে কৃষির জন্য হাইড্রোপোনিস্ক ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য৷ দিনভর এত শত ব্যস্ততার মাঝেই মজা হচ্ছে৷ সঙ্গে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু করার আনন্দ৷ নিজেদের লেখা আর সুর করা একটা গান কিংবা স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের হাতেখড়িও যে এখানে এসেই৷ সেই সঙ্গে দেশসেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলা কিংবা অ্যামেজিং রেসের অ্যাডভেঞ্চার, তবে সবকিছুর মধ্যে যোগসূত্র একটাই—ইন্টারনেট৷ আই-জেন ক্যাম্পের শক্তি এখানেই৷ সব টাস্ক তাদের করতে হচ্ছে ইন্টারনেটের সহায়তায়৷
বলছিলাম গ্রামীণফোন-প্রথম আলো আই-জেন ২০১৫-এর চূড়ান্ত তথা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার কথা৷ এ পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে দেশসেরা নয়টি আঞ্চলিক আই-জেন স্কুল দল৷ তাদের এই প্রতিযোগিতা দর্শকেরা দেখতে পাবেন টিভি পর্দায়৷ আই-জেনের চূড়ান্ত পর্ব নিয়ে একটি রিয়েলিটি শো প্রচার হচ্ছে চ্যানেল আইয়ে—প্রতি সোমবার রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে৷

পৌনে ৯ লাখ থেকে ৪৫, ২ হাজার থকে ৯
গ্রামীণফোন-প্রথম আলো আই-জেন শুরু হয়েছিল গত এপ্রিলে৷ প্রথম আলো বন্ধুসভার পরিচালনায় সারা দেশে আই-জেনের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় দুই হাজার স্কুলে৷ অংশ নেয় ৮ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্য থেকে এক হাজার স্কুল অংশ নেয় জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়৷ ৬৪টি জেলার প্রতিটি থেকে পাঁচজনের সেরা স্কুল দল অংশ নেয় আটটি অঞ্চলে তিন দিনের আবাসিক আই-জেন ক্যাম্পে৷ আর এখন আঞ্চলিক ক্যাম্পের সেরা নয়টি দল অংশ নিচ্ছে জাতীয় অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতায়৷ চূড়ান্ত পর্বের স্কুলগুলো হলো সিরাজগঞ্জ কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ; সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, ঢাকা; বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, বগুড়া; সিলভার বেলস কিন্ডার গার্টেন অ্যান্ড গার্লস হাই স্কুল, চট্টগ্রাম; হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, হবিগঞ্জ; বরিশাল জিলা স্কুল, বরিশাল; ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, ঠাকুরগাঁও; খুলনা জিলা স্কুল ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চবিদ্যালয়, গাজীপুর।

আই–জিনিয়াসদের নিয়ে মঞ্চে গান গাইছেন হৃদয় খান, সঙ্গে দুই উপস্থাপক নাফিসা ঝুমুর ও অর্ণব খান
আই–জিনিয়াসদের নিয়ে মঞ্চে গান গাইছেন হৃদয় খান, সঙ্গে দুই উপস্থাপক নাফিসা ঝুমুর ও অর্ণব খান

প্রতিদিনই নতুন কিছু
আই-জেনের স্কুল, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়গুলোতে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছিল প্রতিযোগিতাও। তবে চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু একেবারে ভিন্ন রকমের। নয়টি দল গাজীপুরের গ্রিনটেক রিসোর্ট অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে অংশ নিচ্ছে একটি আবাসিক ক্যাম্পে৷ এখানে প্রতিদিনই নতুন কোনো টাস্ক দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের৷ টাস্কগুলোতে নিজেদের বুদ্ধি ও ইন্টারনেটের শক্তি ব্যবহারের সুযোগ যেমন থাকছে, তেমনি দেখা মিলছে প্রিয় মানুষদের৷ বিভিন্ন টাস্কে আই-জিনিয়াসদের সঙ্গে ছিলেন রন্ধনশিল্পী নাহিদ ওসমান, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম, গীতিকার কবির বকুল, সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, সোলসের মীর মাসুম, হৃদয় খান, খুদে গানরাজ প্রান্তি, হৃদ্ধ, ইমরান, আল মামুন, রাফি৷ ভিডিও বার্তার মাধমে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক আনিসুল হক৷ সেফ ইন্টারনেট নিয়ে একটি বিশেষ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী মিথিলা ও নাভিদ মাহমুদ৷ আই-জিনিয়াসদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় এনামুল হক বিজয় ও তাসকিন আহমেদ এবং জাতীয় মহিলা দলের ক্রিকেটার জাহানারা আলম ও সাথীরা জাকির জেসী৷ আছেন অনুষ্ঠানের দুই উপস্থাপক মডেল অভিনেত্রী নাফিসা কামাল ঝুমুর ও মডেল অর্ণব খান৷ প্রতিদিন তাদের জন্য থাকছে নতুন কোনো টাস্ক। দৈনন্দিন জীবনের পরিচিত নানা ঘটনা বা সমস্যার মোকাবিলা করবে তারা। আর সেটার সমাধান করতে হবে অবশ্যই ইন্টারনেটের সহায়তায়। এ নিয়েই প্রতিযোগিতা। টাস্কগুলোতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নম্বর পাবে প্রতিটি দল। এর ভিত্তিতেই সপ্তাহান্তে নয়টি থেকে কমতে থাকবে দলের সংখ্যা। সেই সঙ্গে প্রতিযোগীদের জন্য থাকছে নানা চমক।

এসএমএস ভোট
এবারের আই-জেনে দর্শকদের জন্য থাকছে স্কুল দলগুলোকে ভোট দেওয়ার সুযোগ৷ এসএমএসে দলগুলোকে ভোট দেওয়া যাবে আগামীকালের আই-জেনের টিভি অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের পর থেকে৷ আই-জেনের বিভিন্ন টাস্কের মাধ্যমে গ্র্যান্ড ফিনালেতে যাবে তিনটি স্কুল দল৷ আর সেখানে ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রিতে তাদের সঙ্গে যোগ দেবে আরও একটি দল এসএমএসের পুরো সময় ধরে, যে দলটি সবেচেয়ে বেশি ভোট পাবে, তারাই ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে গ্র্যান্ড ফিনালেতে যেতে পারবে৷ এসএমএস পাঠাতে হবে যেভাবে: মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে স্কুলের নির্ধারিত কোডটি লিখে পাঠাতে হবে ৯৯৩৩ নম্বরে, শুধু গ্রামীণফোন নম্বর থেকে৷

মজার ক্যাম্প, ক্যাম্পের লড়াই
ক্যাম্পে দিন যত গড়াচ্ছে, বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ দলের মাইশা মান্নানের মন খারাপের প্রকোপ ততই বাড়ছে৷ মন খারাপের কারণ? ‘ভাইয়া, এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না৷’ অন্যদিকে আরেক মাইশার কান্না শুরু হয় প্রতি পর্বের ফলাফল দেওয়ার সময় হলেই৷ চট্টগ্রাম সিলভার বেলস কিন্ডার গার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল দলের মাঈশা মিশকাত এমনিতে খুবই ফূর্তিবাজ৷ ক্ষণে ক্ষণে গান শুরু করে দিয়ে মাতিয়ে রাখে ক্যাম্প৷ হাসিখুশি এই মেয়েটিও কান্না জুড়ে দেয় যাওয়ার কথা মনে হলে৷ আই-জেন ক্যাম্প এমনই৷ কঠিন কঠিন টাস্ক আর টেনশনের মধ্যেও নাচগান, খেলা, সাঁতার, আনন্দ আড্ডায় জীবনের স্মরণীয় সময় কাটাচ্ছে ক্যাম্পাররা৷ মিলেছে নতুন বন্ধু৷ অনেকের তো ছদ্মনামই বেশি পরিচিত আই-জেন বন্ধুদের মাঝে৷ সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল দলের দলনেতা রুম্মান ‘পণ্ডিত’ হিসেবে বাড়তি সম্মান পায় বন্ধুদের কাছে৷ তার কাছে নাকি সব প্রশ্নের উত্তর আছে৷ হবিগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় দলের আবীরের সুর আবার ভিন্ন৷ ‘এখানে এনজয় করতে এসেছি৷ শিখতে এসেছি৷ যত দিন থাকছি, সেটা উপভোগ করার চেষ্টা করব৷

পুরস্কার
আই-জেনের চ্যাম্পিয়ন দলটি পুরস্কার হিসেবে পাবে ২৫ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি৷ এই দলের প্রত্যেকের জন্য থাকবে একটি করে ল্যাপটপ কম্পিউটার৷ সেই সঙ্গে তাদের স্কুলে করে দেওয়া হবে একটি কম্পিউটার ল্যাব৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় রানার্সআপ দলগুলো পাবে যথাক্রমে ১০ লাখ ও ৫ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি৷ এ ছাড়া শীর্ষ নয়ের কোনো একটি দল অপেরার সৌজন্যে পাবে ভারতে অপেরা কার্যালয়ে শিক্ষা সফরের সুযোগ৷
গ্রামীণফোন ও প্রথম আলোর উদ্যোগে আই-জেন আয়োজনে সহযোগী হিসেবে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সহযোগিতা করছে অ্যালপেনলিবে, মাইক্রোসফট, ওপেরা মিনি, এখানেই ডট কম, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, উরি ব্যাংক, রেডিও ফূর্তি ও চ্যানেল আই। আই-জেনের বিস্তারিত জানা যাবে www.prothom-alo.com/igen ও www.facebook.com/IGEN এই ঠিকানায়।