ইফতারে স্মৃতিময় ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস

অলংকরণ : তুলি
অলংকরণ : তুলি

‘ভীষণ মিস করছি তোদের, যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস সবাই’ লিখে নিজের ফেসবুকে গত বছর ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের ছবিগুলো শেয়ার করেছেন আল মামুন নামের ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী। সজীব হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসের ইফতারের স্মৃতি খুব মনে পড়ে, মিস করি সবাইকে।’


সাধারণত প্রতিবছর পবিত্র রমজানে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো খোলা থাকে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস। অন্য সময় বিকেল বা সন্ধ্যা নামতেই ক্যাম্পাস যখন ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনত, রমজানে দেখা মিলত ঠিক তার উল্টো চিত্র।

রমজানের প্রতিটি বিকেলে ক্যাম্পাসে বাড়তে থাকত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হতো ইফতারের ব্যস্ততা। কেউ ইফতারি কিনে আনছেন, কেউবা আনছেন পানি আবার কেউ সবুজ মাঠে পেপার বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা করছেন। কারও হাতে যেন দুই মিনিট দাঁড়ানোর সময় নেই। বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অথবা এফএম রেডিও শুনে চলে ইফতারের ক্ষণ গণনা। ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, হলের খেলার মাঠ, বকুল চত্বর, বিজয় চত্বর, টেনিস গ্রাউন্ড, হলের ছাদে চলত ইফতারের প্রস্তুতি।

রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন জেলা উপজেলার ছাত্র কল্যাণ সংঘ-সমিতি, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র-জুনিয়র, আবার ডিপার্টমেন্টের আলাদা আলাদা ব্যাচ, কাছের বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে, এমনকি ক্যাম্পাসের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আয়োজন করত ইফতারের।


ইফতারিতে ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজি, খেজুর, জিলাপি, ফলমূল এসব খাবার অমৃত মনে হতো। ইফতার শেষে মসজিদে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতেন সবাই। প্রতিদিনের ইফতারের সময় এ যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করত ক্যাম্পাসে।


করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১৮ মার্চ বন্ধ হয়েছে ঢাকা কলেজ। তাই এই রমজানে ক্যাম্পাসে নেই ইফতারের ব্যস্ত আয়োজন, নেই উৎসবমুখর সেই পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের পদচারণে বিহীন ক্যাম্পাস যেন এক ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে।


ক্যাম্পাসের ইফতারের স্মৃতিচারণা করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুল আলম রাকিব বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের স্মৃতিগুলো ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। ইফতারের ওই স্মৃতিগুলো খুবই মিস করি। পড়াশোনার কারণে পরিবার থেকে দূরে থাকলেও ইফতারের ওই সময়টায় মনে হতো যেন পরিবারের সঙ্গেই ইফতার করছি। করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আজ আর ক্যাম্পাসে ইফতারের সেই আয়োজন নেই।’

মাহমুদুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ইফতার মানে অন্য রকম অনুভূতি। মনে হতো পরিবারের সঙ্গে ইফতার করছি। হলের রুমে হতো নান্দনিক ইফতার। ব্যাচওয়ারি ডাইনিংয়ে আয়োজন হতো বাহারি সব ইফতার। জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি, বিভাগীয় প্রাক্তন-বর্তমানের ইফতার উৎসব ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এসব আয়োজন হতো ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠে, গ্যালারিতে কিংবা হলের ছাদে। এসব ইফতার অনুষ্ঠান রীতিমতো মিলনমেলায় পরিণত হতো। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এ বছর সেসব আয়োজন মিস করছি। নিজের ভেতর একটা শূন্যতা অনুভব করছি। ক্যাম্পাস উন্মুক্ত থাকলে আজও সেখানে রমজানের ইফতারকে ঘিরে কতই না প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যেত।’


হাসান তামিম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রমজানজুড়ে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করলেও ক্যাম্পাসের আরেক পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে মধুর সেই স্মৃতি যখন রুমমেট, বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে ইফতারের আয়োজন হতো।

তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কাটিয়ে এই রমজানে না হোক, পরবর্তী সময়ে বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়র, শিক্ষকদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে দেখা হবে—এই প্রত্যাশাই সব শিক্ষার্থীর।

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা কলেজ