ইভিএমের সমালোচনায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল

বাংলাদেশে নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বিষয়ে প্রথম দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার চায় না দেশের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সভায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সমালোচনা করেছে। যে দুই–একটি দল ইভিএমের বিরোধিতা বা সমালোচনা করেনি, তারা সরাসরি এর পক্ষেও অবস্থান নেয়নি।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিন দফায় ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করবে ইসি। তারই অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ১৩টি দলকে মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে চিঠি দেয় ইসি। তবে আজকের সভায় ১০টি দল অংশ নিলেও গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি (বিজেপি) অংশ নেয়নি।

আগামী নির্বাচন ইভিএমে হোক তা জাতীয় পার্টি চায় না বলে জানান দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ধারণা হলো ইভিএম মানে এর মধ্যে অন্য কোনো কারসাজি আছে। ইভিএম মানে বিশেষ দল কিছু করতে পারে। ইভিএমের দোষের চেয়ে বড় হলো দেশের ভোটাররা ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।

ইভিএম মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, দেশের ৩০০ আসনে যদি ইভিএম ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে করেন। তা না পারলে বৈষম্য করা ঠিক নয়। এক কেন্দ্রে ইভিএম, আরেক কেন্দ্রে ব্যালট ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করেন, ইভিএম ডিজিটাল কারচুপির একটি নির্ভরযোগ্য যন্ত্র। ভোটাররা যদি আস্থাবান না হন, তাহলে ইভিএম আর যা–ই বলুন, কোনোটাই কার্যকর হবে না।

আরেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি বলেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পর সবকিছু হয়ে যাওয়ার পর লেখা আসে, ‘কনফার্ম অর ক্যানসেল’। কনফার্ম বাটনে ভোটার চাপ নিশ্চিত করতে হবে ইভিএমে। অন্য কারও চাপ নিলে হবে না।

নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সমস্যা ইভিএমে নয়। সমস্যা হচ্ছে যখন ভোট দেওয়া হয়, জাস্ট যেটা পুশ করা হয়, ওই জায়গায় যে ডাকাত থাকে, তাদের সরাবেন কীভাবে। এটা হচ্ছে নির্বাচনের বড় সমস্যা।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেশন টুলস ফ্যাক্টরির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্ন তুললেন, ওখানে যদি আরেকজন থাকে, এতে তো ইভিএমের কিছু করার নাই। এটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সমস্যা।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএমের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের মতামত এসেছে। আরও দুটি সংলাপ হবে। সেখানে আরও মতামত পাব। তখন আমরা এ বিষয়ে বলব।’

সভায় আরও অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর, ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিরাও সভায় অংশ নেন।