ইভ্যালি কার্যালয়ের ভবনমালিক হাইকোর্টে হাজিরা দিলেন, অডিটে সহযোগিতার নির্দেশ

সুপ্রিম কোর্ট
ফাইল ছবি

রাজধানীর ধানমন্ডির যে ভবনটিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কার্যালয়, সেই ভবনমালিক শেখ সালাউদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার ইকোর্টে হাজিরা দিয়েছেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট তাঁকে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত করে কোম্পানির অডিট কাজে (নিরীক্ষা) সব ধরনের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি একই বেঞ্চ এক আদেশে ভবনমালিক শেখ সালাউদ্দিনকে ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এ অনুসারে আজ সকালে তিনি আদালতে হাজির হন। ধানমন্ডির ১৪ নম্বর সড়কের ৮ নম্বর বাড়িতে ইভ্যালির কার্যালয়।

আদালতে ভবনমালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামাল উল আলম, এ এস এম আবদুর রাজ্জাক। ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোর্শেদ আহমেদ খান। আর গ্রাহক ফরহাদ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন।

পরে আইনজীবী মোর্দেশ আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবনমালিককে বিবাদী হিসেবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পক্ষভুক্ত করে হাইকোর্ট ইভ্যালির চলমান অডিট কাজে তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজন হলে তাঁকে আবার আদালতে আসতে হবে বলেছেন হাইকোর্ট।’

ইভ্যালিতে পণ্যের অর্ডার দিয়ে অর্থ পরিশোধ করার পর পণ্য ও টাকা কোনোটি ফেরত না পেয়ে মো. ফরহাদ হোসেন নামের এক গ্রাহক গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় একই বছরের ১৮ অক্টোবর আদালত ইভ্যালি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেন।

এরপর ইভ্যালির সাতটি গাড়ি নিলামের প্রক্রিয়া পরিচালনাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে পর্ষদ একটি আবেদন করে। শুনানি নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রাসেল, তাঁর স্ত্রী, তাঁদের সন্তান, মা-বাবা ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্য এবং ইভ্যালির ভবনমালিকের ব্যাংক (ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক) হিসাব কেন জব্দ করা হবে না, এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের কারণ দর্শাতে বলেন।

এর ধারাবাহিকতায় রাসেলের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ইভ্যালির সাবেক নির্বাহী পরিচালক এহসান সারওয়ার চৌধুরী ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর শেয়ার নেওয়ার মৌখিক ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেদিন আদালত তাঁদের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলফনামা আকারে লিখিত প্রস্তাব দাখিল করতে বলেন। রাসেলের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভায়রা আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে আবেদন ও হলফনামা আকারে অভিপ্রায় প্রকাশ করেন।

এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে ইভ্যালির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনের (সাবেক চেয়ারম্যান) ৫০ শতাংশ শেয়ার রাসেলের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভায়রার কাছে হস্তান্তরে অনুমতি দেন।

একই সঙ্গে ইভ্যালির প্রাপ্ত শেয়ারগুলো ওই তিন আত্মীয় আদালতের অনুমতি ছাড়া বিক্রি ও হস্তান্তর করতে পারবেন না বলেও আদেশে বলা হয়েছে। ওই তিনজন হলেন রাসেলের শ্বশুর রফিকুল আলম তালুকদার, শাশুড়ি ফরিদা তালুকদার ও ভায়রা মো. মামুনুর রশীদ।

আরও বলা হয়, রফিকুল আলম তালুকদার, ফরিদা তালুকদার ও মামুনুর রশীদ তাঁদের সব কাজের জন্য আদালতের নিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ করা অডিটরকে (নিরীক্ষক) অডিট কাজে তাঁরা সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। এ ছাড়া ইভ্যালির সাবেক নির্বাহী পরিচালক এহসান সারওয়ার চৌধুরীকে পর্ষদ কর্তৃক নিযুক্ত অডিটরকে এ কাজে সব ধরনের সহযোগিতা করতে নির্দেশে বলা হয়। অসহযোগিতার কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইভ্যালির নাম দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত। প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তাঁরা কারাগারে আছেন।