
ঈদ শুভেচ্ছাসংবলিত তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে খুলনা নগর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা মূলত নগরবাসীকে এভাবে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ কার্যক্রমে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাই বেশি এগিয়ে।
সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া এগুলো সাঁটানো নিষেধ। কিন্তু অবৈধ তোরণ, ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সৌন্দর্যবর্ধনের স্থান নগরের ময়লাপোতা, রয়েল চত্বর, শিববাড়ি মোড়, শহীদ হাদিস পার্কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। এ ছাড়া কেডিএ সড়ক, পুরাতন যশোর লোয়ার রোড, রূপসা ঘাট, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তা মোড়, বিভিন্ন কলেজের সামনে, মজিদ সরণি, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, জিরো পয়েন্টসহ ছোট-বড় সড়কের দুই পাশে, সড়ক বিভাজনে ও গাছেও আছে ব্যানার ও ফেস্টুন।
এ ছাড়া বিভিন্ন মোড়ে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু তোরণ। আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কার্যালয়ের আশপাশের কয়েক শ গজের মধ্যে সাত-আটটি তোরণ বানানো হয়েছে। এ ছাড়া নগরের সৌন্দর্যবর্ধন স্থাপনা শিববাড়ি মোড়ের ফোয়ারার পুরোটাই ঢাকা পড়েছে। ময়লাপোতা মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধন স্থাপনাটিও প্রায় ঢাকা পড়েছে।
এসব ব্যানারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক শেখ সোহেল, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদি, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন, সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমানের নাম ও ছবি বেশি দেখা গেছে।
নগরের ডিজিটাল ব্যানার তৈরির প্রতিষ্ঠান মেট্রো ডিজিটাল অ্যান্ড ক্রেস্টের ব্যবস্থাপক জনি রহমান বলেন, নগরের ডিজিটাল ব্যানার তৈরির প্রায় ২৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ বছর অধিকাংশ প্যানা-ব্যানার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তৈরি করিয়ে নিচ্ছেন।
‘শিল্প রংয়ের’ দুই শ্রমিক মো. রাকিব শেখ ও বেল্লাল বলেন, এরই মধ্যে তাঁরা দেড় হাজারের বেশি প্যানা-ব্যানার ছাপিয়েছেন। রাত তিন-চারটা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। হাতে প্রচুর কাজ জমা রয়েছে। এখনো অনেকে অর্ডার দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের তিন নেতা বলেন, ঈদ, পয়লা বৈশাখ কিংবা অন্যান্য উৎসব উপলক্ষে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর রেওয়াজ কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। নেতা-কর্মীরা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত এমন প্রচারণা চালান। সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সামনে নির্বাচন করতে চাই। তাই সরকারের উন্নয়ন-ভাবনা তুলে ধরে ব্যানার ও তোরণ নির্মাণ করেছি। এগুলো কারও চলাচলে সমস্যা তৈরি করছে না।’
তবে এ ধরনের প্রচারণার বিষয়টি এখন রুচিহীন ও দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সাধারণ সম্পাদক কুদরত ই খুদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সস্তা সুনামের আশায় নগর কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন না নিয়েই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন লাগাচ্ছেন। এতে নগরের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি এখন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে। আত্মপ্রচারণার এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া জরুরি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ লাইসেন্স কর্মকর্তা এস কে এম তাছাদুজ্জামান বলেন, গত বুধবার সিটি করপোরেশনের ৩৪তম সাধারণ সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নগরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঈদের পর অবৈধ বিলবোর্ড ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হবে। এর আগে অপসারণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।