ঈদে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল করতে দিতে চায় না বিআরটিএ

বেপরোয়া গতিতে চালানোয় বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

গত ঈদুল ফিতরের সময় দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার পেছনে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ জন্য আসন্ন ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানতে জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বিআরটিএর সম্মেলনকক্ষে গতকাল রোববার সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে একটি কর্মশালা হয়। সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আয়োজিত এ কর্মশালায় জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয়। তবে সংস্থাটি বলেছে, সার্ভিস রোড থাকলে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারে।

তবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, বিআরটিএর এই সুপারিশ বাস্তবসম্মত নয়। অন্যদিকে মোটরসাইকেলের চালকেরা বলছেন, ঈদের সময় এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে বাড়ি ফিরতে তাঁদের ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে।

বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে বিআরটিএ জানিয়েছে, ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরের (৯ মে থেকে ১৬ মে) সময় দেশে ৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮ জনের মৃত্যু হয়। সেই হিসাবে, পথে প্রতিদিন গড়ে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আর চলতি বছরের ঈদুল ফিতরের আট দিনে (২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে) ১০৬টি দুর্ঘটনায় মোট ১০৬ জনের প্রাণ গেছে। গড়ে প্রতিদিন ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

এর আগে ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরের সময় (২০ থেকে ২৬ মে) ৪১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০ জন নিহত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে ঈদুল ফিতরের (৩০ মে থেকে ৬ জুন) সময় দেশে ৬০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৩ জনের প্রাণ গিয়েছিল।

সংস্থাটির মতে, এবারের ঈদুল ফিতরের সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন। কেননা দেশে কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনাও। বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২ হাজার ২১৪ জন, যা ওই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। ২০২১ সালে দেশে আগের বছরের চেয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৫০ শতাংশ ও মৃত্যু ৫১ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

করোনার কারণে দেশের মোটরসাইকেল খাতে যে মন্দাভাব তৈরি হয়েছিল, খাতটি তা কাটিয়ে উঠছে
প্রথম আলো

বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, এবারের ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল এর পেছনে বড় একটি কারণ। তদন্তে এটা পাওয়া গেছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএর সভায় আলোচনা হয়েছে। তবে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে কি না, তা সভার কার্যবিবরণীতে যুক্ত না হলে বলা যাবে না।

আরও পড়ুন

মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের সুপারিশের বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘বিআরটিএর এই সুপারিশ আমার কাছে অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। কারণ, এই সিদ্ধান্ত বিআরটিএ বাস্তবায়ন ও মনিটর করতে পারবে না। তাদের সেই জনবল নেই।’
সড়ক দুর্ঘটনার মূল সমস্যাগুলো নিয়ে বিআরটিএ কাজ করছে না বলে মনে করেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, যদি ঈদের সময় গণপরিবহন আরও সহজলভ্য করা হতো, যানজট নিরসনে আরও মনোযোগ দেওয়া হতো, তাহলে মানুষ ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার বাস ব্যবহার করতেন। গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন না।

আরও পড়ুন

মহাসড়কে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরাও একই কথা বলছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন লিংকন মোহাম্মদ লুৎফরজামান সরকার। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়। প্রতিবার ঈদের সময় মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। এবারের ঈদুল আজহায় একই পরিকল্পনা করছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গ্রামের পথে ঈদযাত্রায় অনেকের একমাত্র বাহন মোটরসাইকেল। কেননা ওই সময় বাস ও ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। পেলেও বাড়তি টাকা গুনতে হয়। আকাশপথে যাতায়াতও ব্যয়বহুল। তাই এসব সমস্যার সমাধান না করে ঈদের সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করার মতো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।

আরও পড়ুন

মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও কয়েকটি সুপারিশ করেছে বিআরটিএ। সেগুলো হলো দ্রুত ও বেপারোয়া গতিতে চলাচল করা মোটরযান ও অননুমোদিত ওভারটেক করে থাকে—এমন মোটরযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, জাতীয় মহাসড়কে হিউম্যান হলার, থ্রি-হুইলার, নছিমন, করিমন ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা, পদচারী–সেতু ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারসহ রাস্তায় চলাচল বা পারাপারের নিয়মকানুন সম্পর্কে পথচারী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া, পেশাদার গাড়িচালকদের ট্রাফিক আইন ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতনতামূলক স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রাখা, কাগজপত্রহীন মোটরযানের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা এবং জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা।

আরও পড়ুন