উদ্ভাবনী ভাবনার বিশেষ স্বীকৃতি

ছাপা পত্রিকা থেকে অনলাইন পাঠকসংখ্যায় বাংলাদেশের শীর্ষে। প্রকাশের বছর দুয়েক পর থেকে প্রথম আলো ছাপা পত্রিকায় সর্বাধিক পাঠক ধরে রেখেছে টানা। অনলাইনে প্রথম আলোর পাঠকসংখ্যা আরও অনেক বেশি। প্রথম আলোর ওয়েবসাইটটি শুধু সংবাদমাধ্যমে নয়, বাংলা ভাষায় সব ধরনের ওয়েবসাইটের মধ্যে পৃথিবীর এক নম্বর। অনলাইন প্রযুক্তি আর নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে ছাপা পত্রিকার গণ্ডি ছাপিয়ে প্রথম আলো এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ‘গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান’। পাঠকের ভালোবাসা আর নানা উদ্যোগের সুবাদে ২৩ বছরে এসেছে অনেক সম্মান আর স্বীকৃতি।

গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২১

সংবাদমাধ্যমের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন (ইনমা) আয়োজিত ‘গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২১’-তে একটি বিভাগে সম্মানজনক স্বীকৃতি (অনারেবল মেনশন) পায় প্রথম আলো। ‘বেস্ট আইডিয়া টু গ্রো অ্যাডভার্টাইজিং সেলস’ ক্যাটাগরিতে এই সম্মানজনক স্বীকৃতি এসেছে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের সংযোগের দিনে ছাপা পত্রিকা ও অনলাইনে করা বিশেষ আয়োজন ‘প্রত্যাশার ৬.১৫ কিলোমিটার’ থেকে। পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিওসহ সংবাদমাধ্যমের এই গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের আসরে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কোনো উদ্যোগ। গত ৩ জুন এই পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৩৭টি দেশের সংবাদমাধ্যমের ৫৭টি উদ্যোগকে পুরস্কৃত করা হয়। গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের সহযোগী গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ।

পুরস্কারের এই ক্যাটাগরিতে ন্যাশনাল ব্র্যান্ড বিভাগে প্রথম পুরস্কার পায় ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস, আয়ারল্যান্ডের ইনডিপেনডেন্ট নিউজ অ্যান্ড মিডিয়া পেয়েছে দ্বিতীয় পুরস্কার, এই বিভাগে তৃতীয় হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ফুড ফর মানসি। প্রথম আলোর সঙ্গে সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে ভারতের দৈনিক ভাস্কর ও নিউজিল্যান্ডের স্টাফ।

ইনমার আফ্রিকা, এশিয়া প্যাসিফিক, ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়া—এই ছয় অঞ্চলের নির্বাচিত আঞ্চলিক সেরা উদ্যোগগুলোকে গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের জন্য বিবেচনা করা হয়। এ বছর ৩৭টি দেশের ২১২টি সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, ডিজিটাল মিডিয়া, টেলিভিশন ও রেডিও থেকে ৬৪৪টি উদ্যোগ আবেদন করে গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের জন্য।

সাউথ এশিয়ান ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড

সাউথ এশিয়ান ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় প্রথম আলো। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ান-ইফরা সাউথ এশিয়া আয়োজিত এ আয়োজনে প্রথম আলো একটি সোনা ও একটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ ডিজিটাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘ডিজিটাল মিডিয়া ইন্ডিয়া ২০২০’ সম্মেলনে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ ও ফেসবুক জার্নালিজম প্রজেক্ট।

ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড রিনের সঙ্গে আয়োজিত ‘তোমার আলোয় উজ্জ্বল বাংলাদেশ’ আয়োজনটি বেস্ট নেটিভ অ্যাডভার্টাইজিং/ব্র্যান্ডেড কনটেন্ট ক্যাটাগরিতে সোনা জয় করে। এ বিভাগে প্রথম আলোর সঙ্গে যৌথভাবে সোনা পায় ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। রুপা ও ব্রোঞ্জ পেয়েছে যথাক্রমে দ্য কুইন্ট ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রথম আলো ডটকমে বিশেষ আয়োজন ছিল ‘নির্বাচন-২০১৮’। মাইক্রো সাইট হিসেবে এই বিশেষ আয়োজন বেস্ট ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন বিভাগে ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। এই বিভাগে সোনা ও রুপা পেয়েছে বিবিসি নিউজ ও দ্য ফেডারেল।

ছাপা কাগেজ প্রতিদিন ৫০ লাখ পাঠক

বহুজাতিক বিপণন ও বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কানতার সম্প্রতি ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে (এনএমএস) ২০২১ সম্পন্ন করেছে। এ অনুযায়ী ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতিদিন ছাপা কাগজে প্রথম আলো পড়েন ৫০ লাখ পাঠক। আর সপ্তাহে অন্তত একবার প্রথম আলো পড়েন, এমন পাঠকের সংখ্যা এক কোটি আট লাখ। পাঠকসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সব সংবাদপত্রের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ।

বিভিন্ন সোশিও ইকোনমিক ক্লাসে (এসইসি) প্রথম আলোর পাঠকসংখ্যা আলাদাভাবেও অন্য সংবাদপত্রের তুলনায় বেশি। এসইসিতে দেশের মোট জনসংখ্যার (১৫ বছরের বেশি বয়সের) ১৪ ভাগ মানুষ প্রথম আলো পড়েন। এনএমএস অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করেন, এমন বাংলাদেশিদের (১৫ বছরের বেশি বয়সের) ১০ ভাগ মানুষ প্রথম আলো পড়েন। প্রথম আলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের ৬ শতাংশ মানুষই বলেছেন, তাঁরা প্রথম আলোর প্রতিদিনের পাঠক।

উল্লেখ্য, এর আগে সর্বশেষ এনএমএস প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেই জরিপে প্রথম আলো ছাপা পত্রিকার রোজ পাঠক ছিলেন ৬৬ লাখ। করোনা মহামারির শুরুতে ছাপা পত্রিকার পাঠক কিছুটা কমলেও পাঠকেরা আবার প্রথম আলোতে ফিরে এসেছেন, সেটাই দেখা গেল অতিসাম্প্রতিক এই ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভেতে।

বিশ্বের এক নম্বর বাংলা ওয়েবসাইট

শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, পাঠকসংখ্যা ও পেজভিউ বিবেচনায় সব ধরনের বাংলাদেশি ওয়েবসাইটের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রথম আলো ডটকম (www.prothomalo.com) । একইভাবে এটি বাংলা ভাষার ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে বিশ্বে এক নম্বর। বাংলাদেশ থেকে যত ওয়েবসাইট দেখা হয়, তার মধ্যে প্রথম তিনে আছে গুগল, ইউটিউব ও ফেসবুক। এর ঠিক পরেই চার নম্বরে অনেক বছর ধরে আছে প্রথম আলো অনলাইন।

প্রথম আলো ডটকম বড়। কিন্তু কত বড়, তার কিছু তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা যাক। ২১০টির বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে অনলাইনে নিয়মিত প্রথম আলো পড়েন ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি পাঠক। পাঠকসংখ্যা বিশ্লেষণ ও র‍্যাঙ্কিংকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যালেক্সায় দেখা যায়, গত তিন বছরে সারা বিশ্বের সব ধরনের ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রথম আলোর অবস্থান চার শ থেকে ছয় শর মধ্যে ওঠানামা করেছে। হাজারের ঘরে নেই অন্য কোনো বাংলাদেশি ওয়েবসাইট। প্রথম আলো ডটকমে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ কোটির বেশি পেজভিউ হয়। ১০ কোটি পেজভিউর ক্লাবে নেই অন্য কোনো বাংলা ভাষার কিংবা বাংলাদেশি ওয়েবসাইট। অ্যালেক্সা র‍্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের সব সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম আলো ডটকমের অবস্থান ছয়। প্রথম আলোর আগে আছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাইমস অব ইন্ডিয়া, মালয়ালম মনোরমা, এনডিটিভি, মানি কন্ট্রোল ও আজতাক।

১ কোটি ৭১ লাখের বেশি অনুসারী নিয়ে বাংলাদেশের সব ধরনের প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও ব্র্যান্ডের ফেসবুক পেজের মধ্যে এক নম্বরে আছে প্রথম আলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্যোশাল ব্যাকারের সাম্প্রতিক এক র‍্যাঙ্কিংয়ে দেখা যায়, দৈনিক সংবাদ ক্যাটাগড়িতে বিশ্বের শীর্ষ দশে আছে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ। এই র‍্যাঙ্কিংয়ে সব ধরনের গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম আলোর অবস্থান পাঁচ। বিশ্বের সব প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও ব্র্যান্ডের ফেসবুক পেজের মধ্যে অনুসারী ও অ্যানগেজমেন্ট বিবেচনায় প্রথম আলো আছে ৫১০ নম্বরে।

  • জাবেদ সুলতান: হেড অব ডিজিটাল বিজনেস