উন্নয়নকাজে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

স্থানীয় সরকারের বার্ষিক বাজেটে প্রতিবন্ধী তথা সুবর্ণ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত বক্তাদের।

গোলটেবিল বৈঠকে (বাঁ থেকে) এ এস এম শাহাজাদা, শিলা রানী দাস ও শফিকুল ইসলাম। গতকাল পটুয়াখালীর কোডেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে
ছবি: সাইয়ান

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্থায়ী কমিটি, উন্নয়ন কমিটি ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের সংগঠনের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ ছাড়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক বাজেটে প্রতিবন্ধী তথা সুবর্ণ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পটুয়াখালীতে কোডেক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থানীয় সরকার ও উন্নয়ন: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় দৈনিক প্রথম আলো, জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থা (এনজিডিও), প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ (এনসিডিডব্লিউ) ও এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর আয়োজন করে।

গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শিলা রানী দাস। তিনি জানান, পটুয়াখালী জেলায় ২ হাজার ৩২৫ জন সুবর্ণ ব্যক্তিকে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। ১ হাজার ৩৭১ জন শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। সরকার প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী লোকজনের জন্য সহজ প্রবেশদ্বার ও সিঁড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় প্রতিবন্ধী লোকজনের জন্য আলাদা বিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে ১২৬টি বিদ্যালয় তৈরিতে সরকার অনুমোদন দিয়েছে।

শিলা রানী দাস আরও বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে প্রত্যেক সুবর্ণ নাগরিকের সঙ্গে আলোচনা করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখতে হবে। বাজেট ঘোষণার সময় সুবর্ণ নাগরিকদের সংগঠনগুলো থেকে প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তথা সুবর্ণ নাগরিক এবং তাদের নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে সরকারের সহায়তা দিয়ে সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারের উদ্যোগের কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আজ অবহেলার পাত্র নয়। তারা পরিবারের আয়ের অংশ হতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করছে। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে যেসব সংগঠন তৈরি হয়েছে, সেগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এডিডির হেড অব প্রোগ্রাম গোলাম ফারুক হামিম। এডিডির ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর নাজমুল হোসাইন খান আলোচনার সূচনাপত্র উপস্থাপন করে বলেন, তাঁদের প্রকল্পটি জেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষায় একটি প্রস্তাব উল্লেখ করা হয়। তাতে প্রতিবছর ইউনিয়ন/পৌরসভা পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ও ব্যয় নিশ্চিত করা, ইউনিয়ন/পৌরসভার স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর একাধিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় আনা, ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিবন্ধী লোকজনের সঠিক তালিকা প্রণয়ন, সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।

সুবর্ণ নাগরিক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের উদ্যোগের কারণে আমরা এখন আর অবহেলার পাত্র নই। আমরা সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে সমাজের সবার সঙ্গে মিশতে পারছি।’

সরকার সুবর্ণ নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এ এস এম শাহজাদা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে ইউনিসেফের এলজিসি জেলা সমন্বয়কারী ইশিতা দে বলেন, গর্ভবর্তী মায়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে প্রতিবন্ধী শিশু জন্মের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। জেলার দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সুবর্ণ নাগরিকেরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। তাই বিষয়টিতে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতিবন্ধীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে একশ্রেণির দালাল চক্র সক্রিয় আছে বলে উল্লেখ করেন কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। এদের প্রতিহত করতে গণমাধ্যমকর্মীসহ সমাজের সচেতন নাগরিকদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান তিনি।

প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়াই মুখ্য নয় বলে মনে করেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠির ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ আলম। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সুবর্ণ নাগরিকদের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন করে মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পটুয়াখালী শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান, প্রতিবন্ধীদের সংগঠন সৌহার্দ্যের সভাপতি আবুল কালাম, এসডিএর নির্বাহী পরিচালক কে এম এনায়েত হোসেন, পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল আহম্মেদ, প্রথম আলোর পটুয়াখালী প্রতিনিধি শংকর দাস প্রমুখ।