উন্নয়নে ভারতের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের অব্যাহত সাহায্য এবং সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, প্রতিবেশী এই দুই দেশকে তাদের উন্নয়ন এবং জনগণের সমৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত সরকারের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে একযোগে ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং দুটি রেলওয়ে প্রকল্পের উদ্বোধনী ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা গণভবন এবং মোদি নয়াদিল্লিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েক বছরে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সড়ক, রেল যোগাযোগ খাতসহ আরও নতুন নতুন খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের জনগণের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা এটা অব্যাহত রাখতে চাই। আমি নিশ্চিত, আমাদের জনগণের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত আমাদের মধ্যে উপস্থিত হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ঢাকা থেকে এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিষয়কমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান নয়াদিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য়-৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন চালু হলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও দ্রুততর হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পটির অবস্থান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। প্রকল্পটির আওতায় রেলওয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ৯৬ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ নির্মাণ উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক। তিনি বলেন, এটি হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম পাইপলাইন, যা দিয়ে ভারতের শিলিগুড়িতে অবস্থিত নুমালীগড় তেল শোধনাগার থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিকভাবে বছরে আড়াই লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে ৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। তিনি এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ও ভারতের যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর জন্মদিন (গতকাল) উপলক্ষে হিন্দিতে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১০ সেপ্টেম্বর আমরা যৌথভাবে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং রেলওয়ের দুটি প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করি। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আজ আমরা আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ যৌথ প্রকল্পের সূচনা করতে যাচ্ছি।’

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এই যোগাযোগ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার বন্ধনকে নিশ্চিতভাবে আরও সুদৃঢ় করবে।’

কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে আমদানিকৃত তেল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম ডিপোতে সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে কোস্টাল ট্যাংকে করে খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে আনা হয়। সেখানে আনলোড করে আবার রেলের ওয়াগনে আপলোড করে নিয়ে যাওয়া হয় পার্বতীপুরে। পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনলে পরিবহনজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত সময় এবং অর্থের অপচয়—এ তিনটিরই সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া, জ্বালানি নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে এ পাইপলাইন কার্যকর অবদান রাখবে।

পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানিসংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি গত বছরের ২২ অক্টোবর স্বাক্ষরের পর চলতি বছরের ৯ এপ্রিল সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথম তিন বছর ২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে শেষ পাঁচ বছর ৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে প্রয়োজনে জ্বালানি তেলের আমদানি এই পাইপলাইনের মাধ্যমে আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। নুমালীগড় রিফাইনারি ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ বছরের জন্য ডিজেল সরবরাহ করবে। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে এ সময় বর্ধিত করা হবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় এলওসির অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প দুটি নির্মাণ করা হবে।

ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের অধীন ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিকরণ এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মিত হলে সমন্বিত ও গতিময় ট্রেন সার্ভিস চালুর মাধ্যমে শহরতলি এবং অন্যান্য জেলার যাত্রীসাধারণের রাজধানী ঢাকায় স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সময় সাশ্রয়ী যাতায়াত সম্ভব হবে।

প্রকল্পটিতে ভারতীয় এলওসির বরাদ্দ ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অপরদিকে, বাংলাদেশ সরকার খরচ করবে ২০৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
যাত্রীসাধারণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকসংখ্যক ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। ফলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পে নির্মিতব্য অবকাঠামোসমূহ রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, টঙ্গী-জয়দেবপুর হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও গতিময় করার ক্ষেত্রে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর ফিডার সেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।