উৎসবের জন্য প্রস্তুত আবাহনী মাঠ
‘মারো টান, হে আল্লাহ; আরও জোরে, হে আল্লাহ’ বলে সমস্বরে চিৎকার করছিলেন কজন জওয়ান। দড়িবাঁধা বিশাল এক ত্রিপল টেনে তুলছিলেন ওপরের দিকে। শীতের শিশির ঠেকাতে ছাউনির কাজ করবে সেটি। এক পাশে সোহেল নামের এক তরুণ ব্যস্ত মাঠে ইট বিছানোর কাজে। সারি বেঁধে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে আবাহনী মাঠের কিছু অংশ সমতল করছিলেন একদল শ্রমজীবী। পৃথিবীর সব থেকে বড় উচ্চাঙ্গসংগীতের উৎসবস্থল প্রস্তুত করছিলেন তাঁরা। এক দিন পরই সেখানে শুরু হবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের ষষ্ঠ আসর।
এসব গতকাল রোববার বিকেলের দৃশ্য। এরও আগে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রস্তুতির কাজ চলছিল সেখানে। কাজ করছেন কয়েক শ শ্রমজীবী মানুষ। তাঁদের কাজ ফুরোতেই চাইছে না। ইতিমধ্যে মাঠ ঘিরে দাঁড়িয়েছে শক্ত টিনের উঁচু প্রাচীর। প্রস্তুত ১৩০ ফুট বাই ৫০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ। সেটির ওপরে ঝুলে নানা রঙের বাতি বাঁধতে দেখা গেল এক তরুণকে। গত বছর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে এ মঞ্চটিই ছিল ৩০ ফুট বাই ৪০ ফুট। এ বছর শুধু যে মঞ্চই বড় হয়েছে তা নয়, উৎসবস্থল হিসেবে আবাহনী মাঠটি আর্মি স্টেডিয়ামের থেকে বেশ খানিকটা বড়।
বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে যাঁরা গেছেন তাঁরা দেখেছেন, বসার জায়গায় মাথার ঠিক ওপরে একটি ছাউনি থাকে। প্রায় সাত হাজার দর্শক সে ছাউনির নিচে বসতে পারতেন। শিশির থেকে মাথা বাঁচিয়ে রাখতেন। এ বছর ছাউনি থাকবে দুটি। অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ দর্শকের জায়গা হবে ছাউনির নিচে। আর্মি স্টেডিয়ামের মতো গ্যালারি নেই বলে আফসোস হতে পারে শ্রোতাদের। সে জন্য মঞ্চের ঠিক বিপরীত মুখে একটি গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসেও পরিবেশনা দেখতে পারবেন বহু মানুষ। প্রতিবছর এ উৎসবে মানুষের চাহিদা থাকে, টয়লেট যেন আরও বাড়ানো হয়। এ বছর নারী ও পুরুষের জন্য তৈরি করা হয়েছে ভিন্ন ৫০টি টয়লেট। আর ভিআইপি টয়লেটগুলো একেবারে বিমানের ককপিটের টয়লেটের মতো। তা ছাড়া এবার খাবারের স্টলও বাড়ছে। মোট কথা, একটি স্বস্তিদায়ক উৎসবের জন্য প্রস্তুত আবাহনী মাঠ।
মাঠের প্রস্তুতিকালে গতকাল উপস্থিত ছিলেন ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাজকর্ম দেখানোর সময় তিনি জানালেন, সারা মাঠ ঘিরে আছে দেড় শ সিসি ক্যামেরা। বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা এজিস এবং পুলিশ ছাড়াও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা। এ বছর প্রাথমিক প্রবেশপথ থাকবে তিনটি। এরপর সার ধরে প্রবেশ করার জন্য থাকবে ১২টি প্রবেশপথ। আয়োজকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, বিগত আসরগুলো থেকে বরং বেশি সুযোগ-সুবিধা যুক্ত হচ্ছে এ বছর।
ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছে কাজাখস্তানের আস্তানা সিম্ফনি ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা। নিজেদের মহড়ার জায়গাটি দেখবে বলে গত রাতে মাঠে আসতে চেয়েছিল তারা। আবাহনী মাঠে সব থেকে আগে তাই প্রস্তুত করা হয়েছে ওই দলের মহড়ার ঘরটি। বিকেলে সেই ঘরে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ-সংযোগ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মঞ্চের বাতি জ্বলবে এ দলের বাদনের মধ্য দিয়ে। এবারই প্রথম পশ্চিমা উচ্চাঙ্গসংগীত যুক্ত হচ্ছে এই আসরে।
২০১২ সালে রাজধানীর বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হওয়ার পর ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। গত বছর পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন প্রায় চল্লিশ হাজার দর্শক-শ্রোতা উৎসবে হাজির থাকতেন। আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ না পাওয়ায় গত ২২ অক্টোবর এ বছরের আসরটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে সংগীতপ্রেমীদের ভেতরে হতাশা দেখা দেয়। সরকারের সহযোগিতা ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উৎসবটি।
উৎসবের জন্য অনলাইন নিবন্ধন শেষ হয়ে গেছে বটে, অফলাইন কিন্তু খোলা। সশরীরে শহরের তিন জায়গায় এখনো উৎসবের জন্য নিবন্ধন করা যাবে। ধানমন্ডি ৮-এ জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ, বনানীর লক্ষ্ণৌ এবং খিলক্ষেতের বেঙ্গল সেন্টারে গিয়ে নিবন্ধনের মাধ্যমে উৎসবের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করা যাবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে উৎসব। এ উৎসব সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই।