এই জীবনে যে কটি দিন পাব...

রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার ।
ছবি: প্রথম আলো

জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীর দিনটা ঘটা করে না কাটিয়ে নিজেরা একান্তে কাটাতে পছন্দ করেন রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার দম্পতি। গত ১৪ মার্চ ছিল তাঁদের দাম্পত্য জীবনের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ হওয়ার দিন। সেদিন ফেরদৌসী মজুমদার পরেছিলেন ৫০ বছর আগের একটা শাড়ি, যে শাড়ি বিয়ের দিন রামেন্দু মজুমদার তাঁকে কিনে দিয়েছিলেন ২৫০ টাকায়। রামেন্দু মজুমদারের কথায়, ‘আজ সকালে এই শাড়িটা পরে আমাকে চমকে দেয় ফেরদৌসী। খুব যত্ন করে এটা গুছিয়ে রেখেছিল।’

রামেন্দু-ফেরদৌসী দম্পতির এই যে বিশেষ দিনে একান্তে সময় কাটানো, পুরোনো মধুর স্মৃতিকে আবার সামনে আনা—এটাই স্পাউস ডের সারকথা। এটা ভালোবাসা দিবসের মতোই কাছাকাছি একটা দিবস, তবে তা বিশেষভাবে বিবাহিত ব্যক্তিদের জন্য নিবেদিত। আজ ২৬ জানুয়ারি সেই দিন। আমাদের দেশে দিবসটি ঘটা করে উদ্‌যাপন হয় না বটে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তা হয় জাতীয়ভাবে।

অন্য অনেক দেশেও তা উদ্‌যাপন করা হয় আড়ম্বরপূর্ণভাবেই। কোনো কোনো দেশে এই দিনে ছুটি নেওয়ার জন্য কর্মীদের উৎসাহিত পর্যন্ত করা হয়। জাপানে দিনটি উদ্‌যাপন করা হয় ‘ন্যাশনাল গুড হাসবেন্ড অ্যান্ড ওয়াইফ ডে’ হিসেবে।

কবে থেকে এই দিবস উদ্‌যাপনের সূচনা, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে প্রথম এই দিবস উদ্‌যাপন শুরু হয় গত শতকের মধ্য আশির দশকে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের উৎসাহে। অনেকে ধারণা করেন, সেখান থেকে এই দিবস উদ্‌যাপনের ধারণা চলে আসে সাধারণের পর্যায়ে। আর দিবসটি জনপ্রিয় হয় ২০০০ সালের পর।

প্রতীকী ছবি।
ছবি: রয়টার্স

স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে মনখুলে একটা বড় ধন্যবাদ জানানোর জন্যই দিবসটি। আমরা অনেকেই দিবসটি উদ্‌যাপনই করি বটে। বিবাহবার্ষিকীর দিনে আমরা অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখি, ‘আমাকে এতটা বছর সহ্য করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ প্রিয়তমা/প্রিয়তম।’ স্পাউস ডেও তা–ই। দিনটি বিবাহিত ব্যক্তিদের জন্য পরস্পর দুঃখ, ভুল–বোঝাবুঝি মিটিয়ে নতুন করে শুরু করার দিন।

জীবনসঙ্গীকে উপহার দেওয়া সব সময় ভালো। কিন্তু এই দিবসের ধারণায় উপহার দেওয়ার বিষয়টি তেমন নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ উপহার হলো একে অপরকে একান্তে সময় দেওয়া। নিজেরা একাকী সময় কাটানো। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি আপনার জীবনসঙ্গীর হাত ২০টা মিনিট ধরে রাখেন বা আলিঙ্গন করেন, এতে যে হরমোন নিঃসরিত হবে, তা দুজনকেই সুখী করবে এবং ভালো অনুভূতি এনে দেবে। কেবল তা–ই নয়, এটা মানসিক চাপ কমাবে এবং একে অপরের কাছে আসার অনুভূতি দেবে।

২.
যুক্তরাষ্ট্রে এই দিবস সামনে রেখে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দম্পতিদের ওপর জরিপ করে। এতে স্বামী বা স্ত্রীরা তাঁদের জীবনসঙ্গী সম্পর্কে অকপট স্বীকারোক্তি দেন। এতে বেরিয়ে আসে অনেক মজার কথা। সাম্প্রতিক সময়ে ১ হাজার ৩৫ দম্পতির ওপর করা এমনই এক জরিপে ৪০ শতাংশ বলেছেন, জীবনসঙ্গী তাঁর কথায় মনোযোগ দেন না। ৩৯ শতাংশের কথা, তিনি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। ২০ শতাংশ বলেছেন, তাঁর স্বামী বা স্ত্রী আর্থিকভাবে দায়িত্ববান নন, যতটা তিনি। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি সংসারের খরচাপাতি তেমন দেন না। ঘরের কাজ, যেমন: থালাবাসন ধোয়ায় হাত লাগান না, ময়লা কাপড়চোপড় মেঝেতে ফেলে রাখেন। প্রতিবারই বিবাহবার্ষিকীর দিনটি বেমালুম ভুলে যান।

তবে অন্য একটি জরিপে এর বিপরীত চিত্রই বেশি উঠে এসেছে। ৬০ শতাংশ বলেছেন, তিনি একজন পরিশ্রমী মানুষ। ৫৬ শতাংশের কথা, তিনি আমাকে হাসিতে মাতিয়ে রাখেন। তিনি আমার ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার মূল্য দেন। একজন ভালো অভিভাবক তিনি। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দেন।

কিছু ভিন্ন তথ্যও এসেছে নানা জরিপে। অনেকেই বলেছেন, তিনি আমাকে ঘাবড়ে দেন। সংসারের যাবতীয় খরচ আমরা ভাগাভাগি করে নিই। আমরা নিয়মিত তর্ক করি। আমি আমার জীবনসঙ্গীকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো কখনো আমার একা থাকারও ইচ্ছা হয়, যাতে আমি পুনরায় প্রেম করার অভিজ্ঞতা নিতে পারি। আমাদের দুজনের মধ্যে আমি দেখতে বেশি সুন্দর।

৩.
পাশ্চাত্যে স্পাউস দিবসে যেসব ক্রিয়াকর্ম প্রচলিত রয়েছে, তা প্রায় সর্বজনীন। সব দেশে দম্পতিদের জন্যই তা প্রযোজ্য। এর মধ্যে রয়েছে সেই স্থানে যাওয়া, যেখানে দুজনের প্রথম দেখা হয়েছিল। সেখানকার গাছ-লতাপাতা ছুঁয়ে দেখা, সেখানকার আকাশ দেখা। এর ভেতর দিয়ে নিজেদের প্রেম নতুন করে আবিষ্কার করা।

স্পাউস দিবসে এভাবেই প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন একজন।
ছবি: টুইটার

আরেকটা কাজ হলো এই দিনে প্রিয় মানুষের জন্য রান্না করা। হতে পারে আপনার রান্নার হাতে জাদু নেই, তবু ইউটিউব দেখে কিংবা কোনো রেসিপির বইয়ের সাহায্য নিয়ে তাঁর পছন্দের কিছু রান্না করে চমকে দিতে পারেন। যেসব দম্পতির সাধারণত ঘরে একসঙ্গে খাওয়া হয় না, তাঁদের জন্য আজ অবধারিতভাবে এক টেবিলে বসার দিন।

ফিরে যেতে পারেন বিয়ের দিনটিতে। আপনি যদি নবদম্পতি না হয়ে থাকেন, তাহলে ঘুরে আসুন স্মৃতির অ্যালবাম থেকে। মনে করুন সেদিন কী কী মজার, আনন্দের, বিস্ময়ের ঘটনা ঘটেছিল।

এখনকার দিনে আমরা অনেকেই প্রাত্যহিক কাজে এত ব্যস্ত থাকি যে কাছের মানুষের সামান্য প্রশংসাটুকু করারও সময় পাই না। অনেক স্বামী বা স্ত্রী কাজের প্রয়োজনে বা অন্য কোনো জরুরি কারণে একে অপরের থেকে দূরে থাকেন, আজকের দিনটি বিশেষভাবে তাঁদের জন্য। একে ‘ফ্যামিলি ডে’ও বলা যেতে পারে। বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনকে মহিমান্বিত করার বার্তাও রয়েছে দিবসটি উদ্‌যাপনের মধ্যে।

ভালোবাসা দিবসের মতোই দিনটি খুব শিগগিরই আমাদের দেশেও উদ্‌যাপন শুরু হয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়।

আজকের দিনটিতে আপনি চমকে দিতে পারেন আপনার জীবনসঙ্গীকে, ফেরদৌসী মজুমদারের মতো করে বা অন্য কোনো উপায়ে।